নাটোরের বনলতা সেন-এর সঙ্গে আমার হঠাৎভাবে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ে। আমি সবে তখন ষোলো গ্রীষ্ম পার করেছি। সেটা উনিশশো পঞ্চাশের জুন মাস। মা অশ্রুবালা দাশগুপ্ত জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের লেডি ডক্টর। আমি সেবার জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেছি। দাদা বণজিৎ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েন, থাকেন হিন্দু হোস্টেলে। জলপাইগুড়িতে বাড়ি এসেছেন গরমের ছুটিতে। সেই অবসরে দার্জিলিংয়ের গুডি রোডে দু'মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা বেড়াতে গেছি। ছুটিটা খুব আনন্দেই কাটল। পুরো মে মাস ধরে রোজ রোদ্দুরে খটখটে দিন। এত খটখটে এপ্রিল-মে মাস দার্জিলিংয়ের পক্ষে বেনজির ব্যাপার। মায়ের হাসপাতালে ছুটি শেষ। দাদাকেও ফিরতে হবে হোস্টেলে। এবার ফিরে যাবো। এমন সময় নামলো তুমুল বর্ষা। রোদ্দুরে ঝুরঝুরে হয়ে যাওয়া পাহাড়গুলো মুষল জলধারার তোড়ে ধসতে শুরু করলো প্রবল বেগে। তিন-চার দিন ধরে চললো শহর ধসার দুঃস্বপ্ন। কারা কখন তলিয়ে যাবে কে জানে। দার্জিলিং শহরের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধসের ইতিহাস লেখা হলো। আমরা বেঁচে গেলেও আটকে গেলাম দার্জিলিংয়ে। ধস নেমে শহর থেকে বেরোনোর সব পথ বন্ধ। সমতলের দিকে যেতে সোনাদায় প্রায় দেড় মাইল রেললাইনসুদ্ধ কার্ট রোড ধসে গেছে বলে শুনলাম। শতাবও নানা স্থানে বাদ বাদ ধস নেমেছে।
Title
স্মৃতির দর্পনে তিন কবি : জীবননান্দ-সুধীন্দ্র-সুভাষ