"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ: অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা"বইটির ভূমিকা: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ : অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা' নামে বন্ধুবর মফিদুল হকের উদ্যোগে সাহিত্য প্রকাশ থেকে যে গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে সে সম্পর্কে প্রসঙ্গত শুরুতে দুটি কথা বলে নেয়া আবশ্যক। | অধ্যাপক রাজ্জাকের সঙ্গে গল্প করার আড়ালে এই সাক্ষাৎকারটি বেশ কয়েকদিনব্যাপী আমি গ্রহণ করেছিলাম, আজকের '৯৩ সাল থেকে প্রায় ১৭ বছর পূর্বে। সাক্ষাৎকারটির অনুলেখনের বেশকিছু অংশ সাপ্তাহিক বিচিত্রা’, বিজয় দিবস সংখ্যা, ডিসেম্বর, '৭৭-এ প্রকাশিত হয়েছিল। কাজটিরসীমাবদ্ধতার কথা সাক্ষাৎকারটিরবর্ণনার সূচনাতে বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ইতিহাস নয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত স্মৃতিকথা। কিন্তু এ স্মৃতিকথাও তিনি নিজে লেখেননি। তাঁর কাছ থেকে প্রায় জোর করে আদায় করা হয়েছে। যা তিনি একবার বলেছেন তাকে লিখিতরূপ দিয়ে দ্বিতীয়বার তাঁকে দেখানাে হয় নি। দেখালে হয়তাে তিনি প্রথমবারের মতাে বলতেন না। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি, ঘটনা এবং সমস্যা সম্পর্কে নিজের স্মৃতি এবং মনােভাব ব্যক্ত করেছেন। কেবল স্মৃতি থেকে বিবৃত এ সমস্ত ঘটনা : সময়, কাল এমন কি বিষয়বস্তুও সংঘটিত ঘটনার বিষয়বস্তু থেকে ভিন্ন হতে পারে। অধ্যাপক রাজ্জাক বিভিন্ন মন্তব্যও প্রকাশ করেছেন। সেসব মন্তব্য বা মূল্যায়ন সম্পর্কে দ্বিতীয় ব্যক্তির দ্বিতীয় মত থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও আমি অধ্যাপক রাজ্জাকের এ স্মৃতিকথা সংগ্রহ করার আগ্রহ বােধ করেছি এবং একান্ত ব্যক্তিগত সংগ্রহে না রেখে তাকে অপর দশজন পাঠক এবং সমাজবিদের সামনে পেশ করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি এই চেতনা থেকে যে, একজন ব্যক্তির জীবন তার কালের সমগ্র ইতিহাস না হলেও, সে জীবন সেই কালের দেশ-সমাজ ও মানুষের ইতিহাসের উপাদান। ব্যক্তিতে, ব্যক্তিতে গুণ-অগুণ, ক্ষমতা-অক্ষমতায় তফাৎ থাকে। তথাপি প্রত্যেক ব্যক্তিই যেমন তার চিন্তাভাবনা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা দ্বারা তার পরিপার্শ্বকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তেমনি সেব্যক্তি তার সময় ও সমাজের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই উভয় প্রক্রিয়াতেই সমাজের নানা ঘটনা-প্রতিঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্য দিয়ে সমাজের বিবর্তন ঘটে। তাই কোনাে জনসমাজের কোনাে নির্দিষ্টকালের ইতিহাস যদি উত্তরপুরুষের জানা আবশ্যক হয়, তাহলে একটি ব্যক্তির জীবনের এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উভয় দিকটি জানা আবশ্যক। ব্যক্তির সক্রিয় ভূমিকার কথা কেবল তার সম্পর্কে অপরের ব্যক্ত তথ্যেই প্রকাশ পায় না। ব্যক্তির ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞানের অন্যতম উৎস ব্যক্তির আত্মকথা। অধ্যাপক রাজ্জাক সেই ১৯৩১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷