"আমাদের পার্ক ও উদ্যান" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বাগান রাজরাজড়ার, নিদেনপক্ষে জমিদারদের ব্যাপার। সাধারণের বাগান বলতে শাকসবজি, বড়জোর ফলফলাদির ক্ষেতই বােঝায়। মােগলরা এখানে বাগান আনেন, তাদের রাজত্ব শেষ হলে আনে ইংরেজরা, তাদের অনুসরণ করে দেশের জমিদারগােষ্ঠী। একসময় জমিদার উচ্ছেদ হলে বাগানগুলিও লােপ পায়। এটুকুই বাংলার বাগানের ইতিহাস। বাংলাদেশে এখনও যে কয়েকটি বাগান আছে প্রায় সবগুলিই ইংরেজ আমলের জমিদারদের বাগানের জরাজীর্ণ অবশেষ। সরকার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু বাগানও তৈরি হয়েছে, প্রথমগুলি বিনােদনমূলক, দ্বিতীয়রা বাণিজ্যিক। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব বাগানের ইতিবৃত্ত উদ্ধার করেছেন মােকারম হােসেন। সংকলিত এসব লেখার কোন কোনটি কাগজে পড়েছি, কিন্তু একত্ৰীকৃত লেখাগুলির ইমপ্যক্ট আলাদা, নিঃসন্দেহে একটি উত্তরণ। কাছের ও দূরের অনেক বাগানের নাম আমরা শুনেছি, দেখেছি বা দেখিনি, কিন্তু কখনই বিস্তারিত জানা হয়নি, জানার ইচ্ছাও যে খুব প্রবল বলা যাবে না। আমরা আজন্ম গাছ দেখে এতটাই অভ্যস্ত যে কয়েকটি ফল ও ফুলের বাইরে বিশাল উদ্ভিজগৎ রয়ে গেল অগােচরে। বাগানও যে একটি শিল্প, তারও যে নানা রকমফের আছে, ইতিহাস আছে, বিবর্তন ঘটেছে সেই খোঁজ আমরা রাখি না। ব্যক্তিজীবনে সমাজজীবনে তা বড় একটি অপূর্ণতা। আমরা বাড়িতে গাছপালা লাগাই ছাদছন্দহীনভাবে, ফুলবাগানেও কোন ব্যতিক্রম ঘটে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে মােকারম হােসেনের উদ্যোগটি সবিশেষ সাধুবাদযােগ্য। | বইটি শুধু তথ্য ভরপুরই নয়, তাতে আছে উদ্দীপনা অনুপ্রেরণার উপকরণও। বলধা বা চৈতন্য নার্সারীর নির্মাতারা কেমন মানুষ ছিলেন সেই ছবি আঁকতেও লেখক ত্রুটি করেননি। যারা তার লেখনিতে সজীব হয়ে উঠেছেন, মনে হবে তারা আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, বলতে চাইছেন নিজেদের স্বপ্নের কথা, আমাদেরও নির্দেশ দিচ্ছেন। বাঙালি আজ নগরজীবনে প্রবেশ করেছে, যে-গ্রামবাংলায় সে শত শত বছর লালিত হয়েছে তার সঙ্গে এই নতুন আবাসকে মেলাতে হবে। শিখতে হবে অনেক কিছু, ব্যক্তিগত বাগানের বদলে নাগরিক উদ্যান, তরুশােভিত সড়ক, নিবিড় সবুজে বেষ্টিত কারখানা, বিদ্যালয়ের জন্য মনােরম পরিবেশ, আরও কতকিছু। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মনস্তাত্ত্বিক পটভূমি তৈরিতে বইটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
জন্ম মাতুলালয়ে, ৩০ অক্টোবর। বাবা : একেএম ফজলুল করিম, মা : মনোয়ারা বেগম। গ্রাম : লক্ষণপুর, পোস্ট : ভবানীজীবনপুর, উপজেলা : বেগমগঞ্জ, জেলা : নোয়াখালী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা। একযুগেরও বেশি সময় দৈনিক প্রথম আলোয় ‘প্রকৃতি’ কলামে লিখছেন। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৮। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : বাংলাদেশের নদী, বর্ণমালায় বাংলাদেশ, বিশ্বের সেরা দর্শনীয় স্থান, বাংলাদেশের মেলা, ঘুরে আসি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ফুল ও ফল, জীবনের জন্য বৃক্ষ, বিপন্ন প্রজাতির খেরোখাতা, প্রকৃতি ও প্রাণসম্পদ (সম্পাদনা), বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, ঋতুর রঙে ফুলের শোভা, আমাদের সবুজ বন্ধুরা, ভোরের ফুল সন্ধ্যার পাখিরা, আমাদের পার্ক ও উদ্যান, ছয় রঙের বাংলাদেশ, বাংলার শত ফুল, জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার পুষ্প-বৃক্ষ ইত্যাদি। পরিবেশসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৩ সালে কাজী কাদের নওয়াজ স্বর্ণপদক, ১৪০৮ ও ১৪১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১১ সালে এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। নেশা ছবি তোলা ও ভ্রমণ।