ভূমিকা সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বিশুদ্ধ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সহ-অবস্থান করে স্রোতস্বিনীর ধারাবেগে লোকসঙ্গীতও একই গতিতে প্রবহমান। মনুষ্য-সৃষ্ট কোনও দুর্যোগ, প্রাকৃতিক কোনও বিপর্যয়, রাষ্ট্রীয় কোনও বিপ্লব-উত্থান, সামাজিক কোনও পীড়ন-অত্যাচার, ব্যক্তিক বা সম্প্রদায়-বিশেষের দুঃখ-বেদনা, আর্তি ও সংক্ষোভ অর্থাৎ সমগ্র জাতির মৌলিক অস্তিত্বের ভাব-প্রতিক্রিয়া ও তার মানসিক-বিলোড়নের সাঙ্গীতিক আধারস্বরূপ লোকায়তিক এই প্রকরণের দৃষ্টান্ত-অনুগামী হয়েই-যে কালের উপযোগী ভাষা ও সুর-বৈশিষ্ট্য সহযোগে একদা দেশাত্মবোধক বা দেশপ্রেমের গানের উৎপত্তি, এমন ধারণার পক্ষে সমর্থন বিরল নয়। বাংলাদেশে নবজাগৃতি ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য-পাদে। বিশ্বনাথ শাস্ত্রীর মতে, '১৮২৫ থেকে ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত' সময়-পরিধিকে এর সূচনাপর্ব বলে অভিহিত করা চলে। এই নবজাগৃতির অন্যতম প্রধান লক্ষণ-বৈশিষ্ট্য ছিল ইতিহাস-চেতনার সুগভীর অনুধ্যান এবং এর ভেতর দিয়ে অতীতের প্রতি নতুনতর দৃষ্টিক্ষেপ, সেইসাথে ঐতিহ্য সমুদয়ের অনুপুঙ্খ ব্যাখ্যা। তাই ঈশ্বর গুপ্তের কালকে অর্থাৎ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে মধ্য-পাদ পর্যন্ত সময়-পরিধিকে দেশপ্রেমের গানের অঙ্কুরোদ্গম কাল বলে অভিহিত করা যায় অনায়াসেই।