আসহাব উদ্দীন আহমদ একাধিক অর্থেই একজন বিশিষ্ট লেখক। এক। তিনি সেই শ্রেণির সাহিত্যিক-ন্যায়বিচারবঞ্চিতদের অন্যতম—যাঁরা মঞ্চস্থ হবার মতাে লিখেও কেন জানি নেপথ্যেই থেকে যান। এঁদের ভেতর ‘নেপােয় মারে দইয়ের যে-অনুদলটি থাকে, তাদের মতাে ভাগ্যের বলদও নন ইনি। হবার কথাও নয়। কারণ, ভাগ্যের হলেও শিঙেল বলেই তাে বলদ। পক্ষান্তরে, বাশিল্পী আসহাব উদ্দীনের ভাবমূর্তিটি অহিংসতায় দীনের রসুলের আস্হাবের মতােই বেমিশেল; আবার সজ্জনতায়ও ‘আহমদ’ ইনি আক্ষরিক অর্থেই ,দুই সুলেখকতার জন্যে যেসব প্রস্তুতি পূর্বশর্তস্বরূপ, এর ক্ষেত্রে সেসবও ছিল সুসম্পন্ন জগতবিদ্যালয়ের ঔপপত্তিক সাহিত্যশিক্ষা আর জীবনবিদ্যালয়ের ব্যবহারিক শিল্পদীক্ষা তিন মনুষ্যপ্রজাতির জন্যে প্রগতিপন্থী সেই দীক্ষাটিও এই যে, সাহিত্যিকের একটি ধ্রুব লক্ষ্য হতে হবে সামাজিক ন্যায়বিচার-যেহেতু প্রাকৃতিক নায়বিচার নির্ভরযােগ্যরূপে সর্বদা লভ্য নয়। চার। তাঁর চোখের-মনের, দু’য়েরই, দেখার দৃষ্টি যেমন স্বচ্ছ; লেখায় সে-দেখার অভিব্যক্তিও তেমনি দক্ষ। পাঁচ এবং সর্বোপরি স্বভাবজ রসবােধ যে-রসের ক্রমবর্ধমান অভাব রবীন্দ্রোত্তর বাংলাসাহিত্যকে কতখানি হতমান করে ফেলেছে, তার মােটামুটি পরিমাপন চলবে প্রমথ-সুধীন্দ্রর ঘনতম রচনাও কী-পরিমাণ রসঘন ছিল তা পুনরানধাবন করলে আসহাব উদ্দীন-রচিত সকল বিষয়কেই আলােকিত করে তুলেছে। ঊর্ধ্বকমাধৃত শব্দবন্ধটি বঙ্কিমের হীরকোজ্জ্বল কৌতুকরস সম্পর্কে রবীন্দ্রের বহুবিশ্রুত এবং ক্রমঅশ্রুত শ্রদ্ধার্ঘ্য থেকে উদ্ধৃত। বাংলাভাষার এক অবিস্মরণীয় কথাশিল্পীর প্রতি এক চিরস্মরণীয় কথাশিল্পীর গভীর তাৎপর্যময় সেই অর্ঘ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তিকেও এই প্রস্তাবনাধীন কথাসাহিত্যিকের লেখার ধরনধারণ আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেয়- হাস্যজ্যোতির সংস্পর্শে কোনও বিষয়ের গভীরতার গৌরব হাস হয় না, কেবল তাহার সৌন্দর্য রমণীয়তার বৃদ্ধি হয়, তাহার সর্বাংশের প্রাণ এবং গতি যেন সুস্পষ্টরূপে দীপ্যমান হইয়া উঠে।লেখক আসহাব উদ্দীন চলিতাৰ্থে সমাজঘনিষ্ঠ, ফলিতাৰ্থে সমাজগর্ভজাত।