মুমূর্ষু সরীসৃপটা যেন পুনরুজ্জীবিত হল। স্টেশনের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত বিস্তীর্ণ প্ল্যাটফরমের বিশাল পরিধিতে পরিব্যাপ্ত যে অগণিত জনতার কোলাহল এতক্ষণ শোকার্তের আর্তনাদের মতো সকলের কর্ণপীড়ার কারণ হয়েছিল, ক্রমে তাও প্রায় নিমজ্জিত হয়ে গেল এঞ্জিনের বেসুরো আসুরিক আওয়াজে। দীর্ঘ, স্থাণু লৌহকক্ষ-সমষ্টির পঞ্জরে এল দুরন্ত প্রাণের স্পন্দন, শোনা গেল আসন্ন গতির বৃহৎ গর্জন। কর্কশ ঘণ্টাধ্বনিতে খণ্ডিত হল বহুজনের বিদায়-সম্ভাষণ, ব্যাহত হল বহুজনের ব্যবসায়িক বার্তা-বিনিময়। অনেকের হয়তো অনেক কিছু থেকে গেল অকথিত, কিন্তু শিয়ালদহ স্টেশনের বৈদ্যুতিক ঘড়ি তার খবর নেয় না। সে চলে আপন নিয়মে, আর তারই নির্দেশে চলে রেলগাড়ি। নীল সার্জের যুনিফর্ম পরিহিত গার্ডের বাঁশি ও আলোর সংকেতে সরীসৃপ অপসৃত হল ধীরগতিতে, অপেক্ষমাণ ব্যক্তিসমূহের অসমাপ্ত কাহিনীর প্রতি নির্দয় ঔদাসীন্যে। এই বিদায়ের ক্ষণটি আমার মনে বড় বেদনাবিধুর হয়ে বাজে। যে জনসমাগমকে আমার পশ্চাতে রেখে এলেম, তার একজনের সঙ্গেও আমার মুহূর্তমাত্রেরও পরিচয় ছিল না, দ্বিতীয় সাক্ষাতে তাদের একজনকেও অপরজন থেকে পৃথক করে চিহ্নিত করতে পারব না, কিন্তু তবু কী যেন একটা অকারণ বিদায়বোধ আমার মনকে আচ্ছন্ন করে প্রতি যাত্রার প্রাক্কালে।