"ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ"বইটির প্রথমের কিছু কথা: মানসিক ঝাঁকুনি ইত্যাদি তা হলে, আপনার আগ্রহ জাগছে? এই বই হাতে নিয়ে আপনি পাতা উল্টে চলেছেন? আপনি কি সত্যিই আগ্রহী? আপনি হয়তাে বলবেন শুধু একটু দেখে নিতে চাই। প্রতিদিন এরকম ডজন ডজন বই বাজারে আসছে—যেসব বই লিখেছেন মনােবিজ্ঞানী আর নামী ডাক্তাররা। আপনার তাই বক্তব্য হবে নতুন আর জানার কিছুই নেই—অন্ততঃ কাজে লাগার মত। সে যাই বলুন, বইখানা আপনি হাতে নিয়েছেন। যেহেতু আপনপর একটু আগ্রহ সঞ্চার হয়েছে। বলেই। আপনার এটা মনে হয়েছে যে মনকে তৈরি করার মধ্যে কিছু বস্তু থাকে। ব্যাপারটা কখনই কোন পাগলামি নয়, যেমন লােকে বলে। এর ফল কেমন তা তাে রােজকার জীবনেই দেখতে পাব। যেসব মানুষকে ঈর্ষা করেন তাদের ব্যাপারটা কেমন? মনে মনে বা সত্যিই কি কখনও যাকে প্রশংসা করেন তাকে বলেননি : কি করে এসব পারেন ? আপনার মত এত তাড়াতাড়ি তাে ভাবতেই পারি না, ঠিক ঠিক তাে নয়ই। বেশি করে ভালাে কাজ করে উপরওয়ালাকে সন্তুষ্টও করতে পারি না। আপনার মত চমৎকার খেলতেও পারি না, কোন কাজেই দেখি আপনার অসুবিধে বা ঝামেলা হয় না। সন্তুষ্ট করা কঠিন, তেমন মানুষকেও আপনি বাগে আনতে পারেন। আপনি কোনভাবেই শত্রু তৈরি করেন না। কখনও অসৎ কাজ করেন না, আপনি ভেঙেও পড়েন না। আপনি সফলতার প্রতীক, প্রত্যেকেই সেটা বােঝে। এর রহস্যটা কি জানার জন্য আমার সব কিছু দিতে রাজি আছি।' এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম জিনিসের মধ্যে একটি। এটাকে বলে মন তৈরি করা। এটার শুরু মানুষ যখন মন পরিষ্কার করে আর তা কাজে লাগানাের কথা ভাবে। | সারা জীবন ধরেই আপনি মনকে তৈরি করছেন। বাড়িতে, স্কুলে, কলেজে, অফিসে বা যখন বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন। আপনি যখন সিনেমায় বা ফুটবল খেলার মাঠে বা গান বাজনার আসরে যান। তখনই তাই করেন। আপনি সজাগ অবস্থায় যা কিছু করেন তাতেই মনকে ব্যবহার করে চলেন। তাতে তৈরি হয় চিন্তার অভ্যাস। আবেগের অভ্যাস এই রকম সব কিছু। অবশ্য ওটাও ঠিক সব কিছুর জন্যই বিশেষজ্ঞ থাকেন। তারা অনেকটা অগ্রসর হন। তাঁরা চান বেশ সুগঠিত প্রবল ক্ষমতার মন। তারা সাধারণ মন নিয়ে খুশি হন না। তাদের লক্ষ্য হল বেশ পুষ্ট মানসিক পেশী। এই রকম মন নিয়ে তাঁরা মনকে ইচ্ছেমত ভারসাম্যে সার্কাসি খেলায় লাগিয়ে জীবনে চমৎকার সাফল্য আনেন। এখানে তাদের সেই মন তৈরি করার কৌশলই কাজে লাগাতে চাওয়া হয়েছে। তারা মনকে এমনভাবে কাজে লাগান যাতে মন এক সময় শুধু একটা বিষয়ই বহুক্ষণ ধরে ভেবে চলতে পারে। হিমালয়ের কিছু মন-গবেষক শুনেছি তাদের মনের সব কিছু উজাড় করে ঢেলে দিয়ে বহুক্ষণ এইভাবে রেখে দিতে পারেন। তবে আপনি হয়তাে বলবেন ওই অর্থে মন-গবেষক হতে চাই না আমি। এসব করার মত আমার সময় নেই। আমি সাধারণ মানুষ, যাকে জীবন বাঁচাবার তাগিদেই ব্যস্ত থাকতে হয়। এতেই আমার সব সময় চলে যায়। সারাদিনে সকাল আর বিকেলে আধ ঘন্টার মত সময়ই আমার নিজের বলা যায়। আমার তাই ওই সার্কাসি কায়দায় মন চালনা করার মত ধৈর্য, সময় বা শক্তি নেই। আমি মন-বীর হতে চাই না। অতএব ধন্যবাদ, এখানেই ইতি টানছি। তবে যাই হােক আমার কাজকর্ম কি করে আরও সুষ্ঠুভাবে করা যায় সেটা জানতে আপত্তি নেই। আমি আরও টাকা রােজগার করতে চাই। আমাকে উঠতেই হবে, আমি ব্যর্থ হতে চাই না। আমি আমার জীবনে সাফল্য আনবােই। আমি
ডেল ব্রাকেনরিডজ কার্নেগী, এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে ২৪ নভেম্বর, ১৮৮৮ সালে জন্ম নেওয়া এই আমেরিকান লেখক তাঁর আত্ম-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও বইয়ের পাতায় আজও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক নাম। সেলফ-ইম্প্রুভমেন্ট, সেলসম্যানশিপ, করপোরেট ট্রেনিং, পাবলিক স্পিকিং, ও ইন্টার পার্সোনাল স্কিল এর মতো দারুণ সব প্রশিক্ষণের উদ্ভাবন ও এসব বিষয়ে লেখা ডেল কার্নেগী এর বই সমূহ আশার আলো দেখিয়েছে অসংখ্য হতাশাচ্ছন্ন মানুষকে। মিসৌরিতে দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়ার দরূণ বালক বয়স থেকেই কাজ করেছেন ক্ষেতখামারে। এর মাঝেও ওয়ারেন্সবার্গের সেন্ট্রাল মিশৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। কলেজ শেষে জীবিকার তাগিদে বেকন, সাবান এবং লার্ড (শূকরের চর্বি মিশ্রিত করা) তৈরির কাজও করতে হয় আর্মর অ্যান্ড কোম্পানির জন্য। ফার্মের প্রধান হিসেবে অনেক সাফল্য লাভ ও ৫০০ ইউএস ডলার সঞ্চয়ের পর ১৯১১ সালে বহুদিনের লালিত স্বপ্ন অধ্যাপক হওয়ার জন্য বিক্রয় সেবার কাজটি ত্যাগ করেন তিনি। কিছু ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা ঝুলিতে নিয়ে যখন ওয়াইএমসিএ- এর ১২৫ নম্বরে বাস করতে শুরু করেন, তখনই পাবলিক স্পিকিং এর ধারণাটি মাথায় খেলা করে কার্নেগীর। সেই সময় মোট লভ্যাংশের ৮০% শতাংশের বিনিময়ে ওয়াইএমসিএ এর পরিচালকের কাছে শিক্ষা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এভাবেই ১৯১২ সাল থেকে কার্নেগী কোর্সের যাত্রা শুরু হয়। পুরো আমেরিকাবাসীর কাছে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পথ হয়ে উঠে তার পদ্ধতি। ডেল কার্নেগী এর বই সমগ্র এর মধ্যে ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স’ বইটিকে তার সেরা অবদান হিসেবে ধরা হয়। প্রথম প্রকাশের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই যার ১৭তম মুদ্রণও প্রকাশ করতে হয়েছিলো। ডেল কার্নেগী এর লেখাগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ‘বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি হবেন কীভাবে’, ‘বন্ধুত্ব ও সম্পদ লাভের কৌশল’, ‘বড় যদি হতে চাও’, ‘ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ’ এমন নানা নামের অনূদিত ডেল কার্নেগী বাংলা বই অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে বাংলাভাষী পাঠকদেরও। ডেল কার্নেগী শ্রেষ্ঠ রচনাসমগ্র এর মধ্যে আরও আছে ‘দ্য বায়োগ্রাফি অব আব্রাহাম লিংকন’, ‘ফাইভ মিনিট বায়োগ্রাফিস’ এবং ‘বিশ্বায়নের পটভূমি’। ১ নভেম্বর, ১৯৫৫ সালে আমেরিকান এই অধ্যাপক মৃত্যুবরণ করেন।