"কিশোর আনন্দ-১২" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ তােমরা, আমাদের দেশের কিশাের-তরুণরা, যাতে আলােকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পার সেজন্য তােমাদের মন ও বয়সের উপযােগী সবচেয়ে সুন্দর আর স্বপ্নেভরা বইগুলাে তােমাদের হাতে তুলে দেওয়া দরকার। আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বহুদিন ধরে সারা দেশে ঐ চেষ্টা করে আসছি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তােমাদের হাতে আমরা তুলে দিচ্ছি নানারকম আনন্দময় উপন্যাস, মজাদার ভ্রমণকাহিনী, মহৎ মানুষদের জীবনী, রম্যরচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও আরও নানা ধরনের বই—এমন সব বই যা পড়লে তােমাদের মন অনুভূতিময় ও কল্পনাপ্রবণ হয়ে উঠবে এবং জ্ঞানের উচ্চতর জগতে প্রবেশের জন্য তােমরা উন্মুখ ও যােগ্য হবে। কিন্তু এসব বই পড়ার পাশাপাশি মানব-সভ্যতার সেই সব বিষয় ও তথ্যও তাে তােমাদের জানতে হবে যেগুলাে জানলে তােমরা সুঅবহিত আধুনিক বিশ্ব-নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। কিশাের আনন্দ প্রকাশ করা হল সে জন্যেই। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে ‘আসন্ন’ নামে আমরা তােমাদের জন্য যে উৎকর্ষধর্মী মাসিক পত্রিকাটি বের করি তার লেখাগুলাে নিয়েই এই ‘কিশাের আনন্দ’ প্রকাশিত হচ্ছে। একজন ছেলে বা মেয়ের যা কিছু জেনে বড় হওয়া উচিত তার অধিকাংশ তথ্যই তােমরা পাবে এই কিশাের আনন্দে। বিশ থেকে পঁচিশ খণ্ডে কিশাের আনন্দ প্রকাশের ইচ্ছা আমাদের রইল। এর মধ্যে বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভূগােল, ভাষা, অর্থনীতি থেকে শুরু করে মানবজগতের অসংখ্য তথ্য তাে তােমরা পাবেই সেইসঙ্গে পাবে অনেক অনবদ্য গল্প, কবিতা, কুইজ, চুটকি, স্মরণীয় বাণী, এমনি আরও অনেক রমণীয় ও উপভােগ্য লেখা। আমরা আশা করি যারা এই বইয়ের সবগুলাে সংখ্যা মন দিয়ে পড়বে পৃথিবীর জ্ঞানজগতের সবচেয়ে জরুরি বিষয়গুলাে সম্বন্ধে তারা একটা মােটামুটি ধারণা পাবে। এ বইয়ের সব লেখাই অত্যন্ত সুলিখিত ও উপভােগ্য। তােমাদের জন্য ভালাে ভালাে লেখকদের যেসব অনন্য লেখা তাঁদের বই ও পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলােকে ঐ সব বই ও পত্রপত্রিকা থেকে সংগ্রহ করে এই সংকলনে প্রকাশ করা হয়েছে। লেখাগুলাে পড়ে তােমরা আনন্দ পেলে আমাদের কষ্ট সার্থক হবে। কেবল কিশাের-তরুণরা নয়, আমাদের ধারণা সব বয়সের সবরকম মানুষই ‘কিশাের আনন্দ’ একইভাবে উপভােগ করতে পারবেন এবং পড়ে উপকৃত হবেন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একইসাথে একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিকও। আর সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে থাকায় একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচয় লাভ করেছেন তিনি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কলকাতার পার্ক সার্কাসে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কামারগাতি গ্রাম। পাবনা জিলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক এবং বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আর ষাটের দশকে বাংলাদেশে সাহিত্যের এক নতুন ধারা সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে, এবং একইসাথে 'কণ্ঠস্বর' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে নতুন ঐ সাহিত্যযাত্রাকে করেছিলেন সংহত ও বেগবান। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের মাঝে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', যা চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমূহ এই ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ভাঙো দুর্দশার চক্র', 'আমার বোকা শৈশব', 'নদী ও চাষীর গল্প', 'ওড়াউড়ির দিন', 'অন্তরঙ্গ আলাপ', 'স্বপ্নের সমান বড়', 'উপদেশের কবিতা', 'অপ্রস্তুত কলাম' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক', 'র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার' ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।