"জীবন সফলতার পাথেয়" বইটির পূর্বকথা নামক অংশ থেকে নেয়াঃ একজন মানুষ যা হতে পারে ফেরেশতাতুল্য কিংবা হতে পারে পশুর চেয়ে অধম। এই যে পার্থিব জগতের দৃষ্টিপথজুড়ে এত এত নেয়ামত, কদমে কদমে এত শত কুদরত, তা কেন? তা এ জন্য যে, এর মাধ্যমে মানব জীবন সুন্দর ও মসৃণ হবে। জীবনে চলার পথে মানুষের যা কিছু প্রয়ােজন এ থেকে তার সাহায্য নিবে। এখন প্রশ্ন হল, যে মানুষের জন্য এত আয়ােজন সে মানুষ কার জন্য? সে হল আল্লাহর জন্য! মানুষ দুনিয়াতে বসবাস করবে, দুনিয়ার নেয়ামত ভােগ করবে আর নিজের জীবনটাকে আল্লাহর জন্য বিলিয়ে দিবে। আল্লাহর হয়ে এ জীবন সমুদ্র তারা পাড়ি দিবে। দুনিয়াকে তারা লক্ষ্য বানাবে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি হবে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আল্লাহ যা চান তাই তারা করবে, আল্লাহ যা চান সেদিকে তারা ফিরেও তাকাবে না। তাকওয়া হবে তাদের অবলম্বন, মৃত্যুর চিন্তা থাকবে তাদের অন্তরে গ্রোথিত। তারা হবে বিনয়ী, অহংকারমুক্ত, তাহাজ্জুদগুজার, রিয়া থেকে দূরবর্তী। তাদের যবানে থাকবে আল্লাহর যিকির, তাদের মন-মগজে মিশে থাকবে সৃষ্টিজগতের ফিকির। তারা হবে মহান ও মহানুভব। ক্ষমা ও দান হবে তাদের মজ্জাগত। আল্লাহমুখিতা, সৃষ্টি থেকে অমুখাপেক্ষিতা এমনই হবে তাদের মহত্বের পরিচয়। তাদের স্বভাবে থাকবে সবর, শােকর, আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। লােভ-লালসা, হিংসা, ক্রোধ, এ থেকে তারা থাকবে চিরমুক্ত। স্বজাতিতে, সকল সৃষ্টিতে উদার মানসিকতা ও কল্যাণকামিতাই থাকবে তাদের জীবন ধর্ম। এটাই হল মানব সৃষ্টির লক্ষ্য আর একেই বলে 'সফল জীবন'। সফল জীবন কী, কেমন, কী তা অর্জনের মাধ্যম, কেমন হয় সফল, অসফল মানুষের ফলাফল এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত বহুজনের হাতে বহুকিছুই লেখা হয়েছে। কুরআন, হাদীস মন্থন করা অভিজ্ঞতা, জীবনের চড়াই-উত্রাই থেকে অর্জিত মণি-মুক্তা তাদের গ্রন্থসমূহকে সমৃদ্ধ ও শােভিত করেছে এবং আজও সমাজে তা হেদায়াতের আলাে বিলিয়ে যাচ্ছে। নববী জীবন থেকে বহুদূরের এ যুগ-প্রজন্মে, সফল মানুষ থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন থাকা এ সমাজ-সভ্যতায়, তাদেরই এক অধমের ইচ্ছার ফসল হল এ ক্ষুদ্র বই। এ বইয়েও পূর্ববর্তীদের থেকে ভিন্ন কিছু করা হয়নি। চেষ্টা করা হয়েছে, প্রতিটি বিষয়ে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু শিক্ষা, চিন্তা, উপদেশ ও পথনির্দেশ পেশ করার এবং চেষ্টা করা হয়েছে, আকাবিরে উম্মতের রেখে যাওয়া বিশাল সম্ভার থেকে সারমর্মটুকু একত্র করার। মৌলিক কথা দ্বারা সাজানাে হয়েছে এই বই। অস্পষ্ট স্থান কিংবা বিশেষ প্রয়ােজনের তাগিদ ছাড়া ব্যাখ্যা কিংবা বিশদ আলােচনার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বইয়ের শেষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে আরও দুটি বিষয় সংযােজন করা হয়েছে, আশা করি সেখানেও পাঠক বড়দের কিছু চিন্তা, তাদের দেখানাে সমাধানের কোন পথ এবং দরদী হৃদয়ের কিছু ব্যাকুলতা খুঁজে পাবেন।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।