“চেগুয়েভারা’র ডায়েরি" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ আর্নেস্তো চেগুয়েভারা ১৯২৮ সালের ১৪ জুন। আর্জেন্টিনার রােজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। বুয়েনস আয়ারসের মেডিক্যাল স্টুডেন্ট ও পরবর্তীকালে পরিপূর্ণ ডাক্তার হিসেবে তিনি। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালায় বসবাস কালে। তৎকালীন নির্বাচিত সরকার জ্যাকোবাে। আরবেনহের শাসনামলে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের। সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং সিআই-এ সমর্থিত বাহিনী। কর্তৃক নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত হতে দেখেন। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে তাকে গুয়েতেমালা। ছাড়তে বাধ্য করা হলে তিনি চলে যান মেক্সিকো শহরে। ১৯৫৫ সালের জুলাইয়ে গুয়েভারা | পরিচিত হন ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে। কাস্ত্রো তখন গেরিলা দল সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন, সেই গেরিলা দলে অচিরেই নিজের নাম নিবন্ধন করেন। কিউবান বিপ্লবীরাই তাকে “চে” নাম দেন। সম্বােধনের ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার একটি। জনপ্রিয় শব্দ হচ্ছে চে। শুরুতে গেরিলা দলের। চিকিৎসক হিসেবে অংশগ্রহণ করলেও ১৯৫৭ সালের জুলাইয়ে তিনি প্রথম রেবেল আমি। কমান্ডার নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বর শেষের দিকে সান্তা ক্লারার যুদ্ধে রেবেল আমির সফল যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন গুয়েভারা। ১৯৫৯ | সালের ১ জানুয়ারী রেবেল আমির চূড়ান্ত বিজয়ের পর নবগঠিত। বিপ্লবী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বনে যান গুয়েভারা। ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ন্যশনাল ইনষ্টিটিউট অব। 'অ্যাগ্রোবিয়ান রিফর্ম-এর ডিপার্টমেন্ট অব। ইন্ডাষ্ট্রির প্রধান হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৯ সালের নভেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারীতে। নির্বাচিত হন মিনিস্টার অব ইন্ডাষ্ট্রি। ১৯৬৪। সালে কিউবার পক্ষে জাতিসংঘে ভাষন দেন। গুয়েভারা। আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার | অন্যান্য দেশে বিপ্লবী যুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। ১৯৬৫ সালে কিউবা ছেড়ে যান গুয়েভারা। বেশ কয়েকমাস আফ্রিকার কঙ্গোতে অবস্থানের পর। ১৯৬৫ সালে ডিসেম্বরে গুয়েভারা ফিরে আসেন। কিউবায়। ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে তিনি। বলিভিয়ায় পৌছান। বলিভিয়ার সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একটি বিচ্ছিন্ন গেরিলা। আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আহত হন। গুয়েভারা। পরবর্তকিালে গ্রেপ্তার হন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রশিক্ষিত বলিভিয়ান সেনাদের হাতে, তারিখটি ছিল ৮ অক্টোবর ১৯৬৭। তার পরের দিনই তাকে হত্যা করা হয়।
জন্ম ১৪ জুন, ১৯২৮ – মৃত্যু ৯ অক্টোবর, ১৯৬৭। তিনি ছিলেন একজন আর্জেন্টিনীয় মার্কসবাদী, বিপ্লবী, চিকিত্সক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না (স্পেনীয়: Ernesto Guevara de la Serna)। তবে তিনি সারা বিশ্ব লা চে বা কেবলমাত্র চে নামেই পরিচিত। মৃত্যুর পর তাঁর শৈল্পিক মুখচিত্রটি একটি সর্বজনীন প্রতিসাংস্কৃতিক প্রতীক এবং এক জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বপ্রতীকে পরিণত হয়। তরুণ বয়সে ডাক্তারি ছাত্র হিসেবে চে সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। এই সময় এই সব অঞ্চলের সর্বব্যাপী দারিদ্র্য তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। এই ভ্রমণকালে তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই অঞ্চলে বদ্ধমূল অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বাভাবিক কারণ হল একচেটিয়া পুঁজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ; এবং এর একমাত্র সমাধান হল বিশ্ব বিপ্লব। এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে চে রাষ্ট্রপতি জাকোবো আরবেনজ গুজমানের নেতৃত্বাধীন গুয়াতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৪ সালে সিআইএ-এর ষড়যন্ত্রে গুজমানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে চে-র বৈপ্লবিক আদর্শ চেতনা বদ্ধমূল হয়। পরবর্তীকালে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় তাঁর সঙ্গে রাউল ও ফিদেল কাস্ত্রোর আলাপ হয়। চে তাঁদের ছাব্বিশে জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন। মার্কিন-মদতপুষ্ট কিউবান একনায়ক ফুলগেনসিও বাতিস্তা উৎখাত করার জন্য গ্রানমায় চড়ে সমুদ্রপথে কিউবায় প্রবেশ করেন। অনতিবিলম্বেই চে বিপ্লবী সংঘের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড পদে তাঁর পদোন্নতি হয় এবং বাতিস্তা সরকারকে উত্খাত করার লক্ষ্যে দুই বছর ধরে চলা গেরিলা সংগ্রামের সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিউবার বিপ্লবের পর চে নতুন সরকারে একাধিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিপ্লবী আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্তদের আপিল পুনর্বিবেচনা ও ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড প্রদান, শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রী হিসেবে খামার সংস্কার আইন প্রবর্তন, কিউবার জাতীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর ইনস্ট্রাকশনাল ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন, এবং কিউবান সমাজতন্ত্রের প্রচারে বিশ্বপর্যটন। এই পদাধিকারের কল্যাণে তিনি মিলিশিয়া বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের সুযোগ পান; ফলত এই বাহিনী পিগস উপসাগর আক্রমণ করে তা পুনর্দখলে সক্ষম হয়। কিউবায় সোভিয়েত পরমাণুব্যালিস্টিক মিসাইল আনার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। চে ছিলেন এক বিশিষ্ট লেখক ও ডায়েরি-লেখক। গেরিলা যুদ্ধের উপর তিনি একটি প্রভাবশালী ম্যানুয়েল রচনা করেন। তরুণ বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোটরসাইকেলে ভ্রমণের স্মৃতিকথাটিও তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় রচনা। বৃহত্তর বিপ্লবে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৬৫ সালে কিউবা ত্যাগ করেন। প্রথমে কঙ্গো-কিনসহাসায় তাঁর বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি বলিভিয়ায় বিপ্লবে অংশ নেন। এখানেই সিআইএ-মদতপুষ্ট বলিভিয়ান সেনার হাতে বন্দী ও নিহত হন চে। চে গেভারা একাধারে ইতিহাসের এক নন্দিত ও নিন্দিত চরিত্র। বিভিন্ন জীবনী, স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ, তথ্যচিত্র, গান ও চলচ্চিত্রে তাঁর চরিত্রের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। টাইম পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় তাঁর নাম প্রকাশিত হয়। আবার গেরিলেরো হেরোইকো নামে আলবের্তো কোর্দার তোলা চে-র বিখ্যাত ফটোগ্রাফটিকে "বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ ফটোগ্রাফ" হিসেবে ঘোষিত।