ফ্ল্যাপে লিখা কথা রবীন্দ্র গোপের কবিতায় মাটির গন্ধ পাওয়া যায়। ফুটে ওঠে দেশমাতৃকার কোমল মুখশ্রী। মা মাটি মানুষ এ ত্রিধারা তার কবিতাকে প্রবাহমান করে বিশ্ব সাহিত্যে সতন্ত্র এক আসন প্রতিষ্ঠা করে। সত্তর দশকের অন্যতম প্রধান কবি রবীন্দ্র গোপ। সমসাময়িক অন্য কবিদের থেকে তাকে আলাদা করে চেনা যায়। কবিতার ভাষা নিয়ে তিনি ছবি আঁকেন আর ছবির ভাষায় লেখেন কবিতা। তাই কবিতা পায় তাঁর হাতে ভিন্নামাত্রা। বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন এ কবি। মহান ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস দীর্ঘ একটি কবিতায় রচিত হয়েছে ‘মায়ের ভাষার গান’ । তা ছাড়াও মায়ের ভাষার অনেক অজানা ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। স্থান পেয়েছে বেশ কটি উল্লেখযোগ্য দেশাত্মবোধক কবিতা। মায়ের ভাষার লড়াইয়ে যারা জীবন করেছে বলিদান, দীর্ঘ কবিতাটিতে তাদেরই বিজয়ের অমর ভাষা অত্যন্ত নিপুণভাবে কবি তুলে ধরেছেন ‘মায়ের ভাষার গান’ কাব্যগ্রন্থে। মহাসময়ের চাকার ঘুর্ণন কবিকে দাঁড় করিয়ে দেয় সত্যের মুখোমুখি। আসন শাসন কাঁপিয়ে কবিতার বারুদ ছিটকে পড়ে স্বৈরাচারের চোখেমুখে। স্বৈরাচারও কামড়ের দাঁতে রক্ত লাগাতে ভুয়ে যায় না। কবির নামে চলে হুলিয়া। দীপান্তর পাঠানোর নির্দেশ জারি করা হয়। কবির ঘর সংসার নিক্ষিপ্ত হয় রাজপথে। তবু আগুনে শব্দের হাপড়ে কবিতার লোহা গলিয়ে কবি তৈরি করেন অন্যায় আর অসুন্দরের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র। সুন্দরের জয়গান করাই কবির মূখ্য কাজ। ‘মায়ের ভাষার গান’ বাঙালির বিজয়ের অমর কাব্য।
সূচিপত্র * মায়ের ভাষার গান * বিক্ষুব্ধ আত্মা : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এবং মুর্তজা বশীরের অমর সৃষ্টি * প্রথম শহীদ মিনার : প্রথম সূর্যের আলো * রক্তের ভাষা এক * অমর একুশের বিশ্ব স্বীকৃতি * একুশতো একদিনে ফুল হয়ে ফুটেনি * একুশের প্রথম কবিতা * একুশের গান * সূর্য জাগার গল্পর * হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সঙ্কলনের (১৯৫৩) কয়েকটি সংগ্রামী কবিতা নমুনা * কাল রাতে উঠেছিল ঝড় * তোমরা নিশ্চিহ্ন করে দাও * মাগো ওরা বলে * স্মৃতির মিনার * ধানের গুচ্ছে রক্ত জমেছে * ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাসের সেলে আহত হয়েছিলেন তাদের তালিকা * ভাষা আন্দোলনের প্রথম বই, কবিতা, গান রফিকউদ্দিন আহমদকে হত্যার প্রতিবাদে মামলা রিপোর্ট : ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে আর একদফা মামলা * বরকত জননীর ঢাকা আগমন * যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মসূচি : একুশ দফা * মহান ভাষা আন্দোলনের যাঁদের অবদান জাতি কোনদিন ভুলবে না * তথ্যপঞ্জি * আমার বুকে অর্ধনমিত পতাকা * বুকে আগুন নদী * তৈরি হওয় ঘরে ঘরে * কবিতা
রবীন্দ্র গােপের জন্ম ১৯৫১ সালের ৫ নভেম্বর। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার অরুয়াইলের জয়নগরে । পিতা : শ্রী উপেন্দ্র গােপ, মাতা : শ্রীমতি যামিনী গােপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যে স্নাতক। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ জীবনের এক গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকারের একমাত্র পত্রিকা- ‘জয় বাংলা’য় জীবনের কর্মযজ্ঞের শুরু। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তেজোদীপ্ত কবিতা পাঠের মধ্য দিয়েই কবিতাঙ্গনে পা ফেলা। বৈপ্লবিক চেতনায় ভাস্বর এ কবি লেখার জন্য জীবনে বহুবার নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়েছেন। কবিতাকে ভালােবেসে জীবনের ভালােবাসা থেকে বঞ্চিত একজন মানুষ ।। সত্যকে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তিনি এক শব্দ সৈনিক। লেখার জন্য জীবনে বহুবার নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়েছেন। রাজনৈতিক চক্রজালে নির্মম পৈশাচিক অত্যাচারে ১৯৯১ সালে ঘরছাড়া হয়েছেন। দ্বীপান্তরে বদলি করা হয়েছে। চাকুরি ঝুলেছে। নরপশু তাড়িত কবি দু’বার গুলির মুখে পড়েছেন। কবিকে বাঁচাতে তার প্রিয় পােষা কুকুর টমি গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ বলি দিয়েছে।। মানবিকতার অবক্ষয়, আত্মিক শুদ্ধতার সংকটের সময়। কবি রবীন্দ্র গােপ কবিতায় সত্য ও সুন্দরের কথা বলার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলতে চেষ্টা করেছেন মানবিক প্রেমের সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধনের কথা। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর কবিতার যে বাক বদল ঘটেছে স্বাধীনতার উত্তাল । প্রকৃতিতে বিষিক্ত কবি রবীন্দ্র গােপ সৃষ্টি ও সৃজনশীল কাব্য রচনায় অন্যতম। দশক বিশ্লেষণে সত্তরের কবি। হিসেবে তিনি একটি সতন্ত্র কাব্যযাত্রা পথে আলাে ফেলে ফেলে অনন্য কাব্যভুবন সৃষ্টি করেছেন। পাঠক তাকে আলাদা ভাবেই হৃদয়ে ধারণ করেন। তার কবিতার মুখে থাকে শব্দের আগুন। যে আগুন কখনাে অন্যকে পােড়াতে গিয়ে নিজেও পােড়েন। বৈপ্লবিক আত্মানুসন্ধানে রচিত একটি কবিতা যেন এক একটি ক্যানভাসে আঁকা জল রং ছবি। আর সে ছবিতে ফুটে উঠেছে বাংলা আর বাঙালির ইতিহাস। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। কবির প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় একশত। তন্মধ্যে উল্লেখযােগ্য বই- মুজিব আমার অন্তরে বাহিরে, পতাকায় রক্তের দাগ, যুদ্ধ জয়ের গল্প, ছাগলের হাসি ও একটি পাউরুটি, নিষিদ্ধ স্বর্গ, জলকণা, মুক্তি যুদ্ধ পথে পথে, আগুনের ফুল, ভগবান কেমন আছ, পেরেক বিদ্ধ প্রজাপতি, বত্রিশের সিঁড়ি, জয়বাংলা, ত্রিশলক্ষ সূর্যের কবিতা, চিবুকে ঈশ্বর, সুন্দর একাকি থাকতে নেই, লােককবিতায় বঙ্গবন্ধু প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব ইত্যাদি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বাের্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও বি.সি.এস তথ্য সমিতির সভাপতি থাকাকালিন বি এন পি, জামাত জোট সরকারের সময় তিনি চাকুরি হারান ।। বর্তমান সরকার কবিকে সােনারগাঁও লােক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে পরিচালক পদে নিয়ােজিত করে। তিনি কথাশিল্পী সাহিত্য পুরস্কার-স্বর্ণপদক, বিকাশ সাহিত্য পুরস্কার, কবি সুফী মােতাহার হােসেন সাহিত্য পুরস্কার স্বর্ণপদক, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রূপসী বাংলা২০১০ পুরস্কার ও চয়ন সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তাছাড়া আমেরিকান বায়ােগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কবিকে ‘ম্যান অব দি ইয়ার-’ ‘৯৮' সম্মানে ভূষিত করে।