আমরা যেটাকে আধুনিক যুগ বলি, তার শুরু চতুর্দশ শতকের শেষে বা পঞ্চদশ শতকের প্রথমদিকে। একের পর এক ঘটে যেতে থাকলো ইটালির রেঁনেসা, জার্মেনির রিফরমেশন, ইংল্যান্ডের জাগরণ, ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ আবিস্কার, এশিয়া ও আফ্রিকায় ইউরোপের ঔপনিবেশ স্থাপন, শিল্প বিপ্লব, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, নিউটন থেকে ডারউইন, প্রযুক্তির বিকাশ, মানুষের আকাশ জয়, শিল্প-সাহিত্যে রূপরূপান্তর, দর্শনে অবৈজ্ঞানিক ঈশ্বরবাদ থেকে মানবতাবাদ। এমন করে আধুনিক সভ্যতা পা দিলো ঊনিশ শতকে। জাপান কিন্তু তখনো নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছিল। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে জাপানের ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলে দেখে, পৃথিবী অনেকদূর এগিয়ে গেছে। জাপান সংকল্প করল, তারাও আধুনিক হবে। অদম্য পরিশ্রম ও কঠোর শৃঙ্খলায় তারা চার শতাব্দীর পথ চার দশকে অতিক্রম করে। আরো কয়েক দশক পরে তারা দুই মহাশক্তির প্রায় সমকক্ষ হয়ে উঠে। সে কারণে তাকে ঘায়েল করতে পরমাণুর আঘাত হানা হলো। ভেঙ্গে দেয়া হলো দেশের মেরুদণ্ড। সেই দেশটাই আবার অতি অল্প সময়ের মধ্যেই স্বগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আর একটি মাত্র দেশ সেই সাফল্য দেখাতে পেরেছে, সেটা হচ্ছে পশ্চিম জার্মেনি। আধুনিকতার দৌড়ে জাপান আজ রাশিয়া ইংল্যান্ডকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তার থেকে একমাত্র এগিয়ে আছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার তালসরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাষ্টার সুরেন্দ্র লাল বড়–য়া ছিলেন বিশিষ্ট সমাজহিতৈষী ও শিক্ষাবিদ, বৃটিশ আমলে পরৈকোড়া ইউনিয়ন বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম জেলা জুরী বোর্ডের সাবেক সদস্য, ‘সপ্তগ্রাম প্রজ্ঞাতিষ্য স্মৃতি সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং “নিত্যপাঠ্য ধর্মপদ” নামে বিখ্যাত গ্রন্থের প্রণেতা। জ্যোতি বিকাশ বড়ূয়া ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিংএ স্নাতক হন। ১৯৬৬ সালে সরকারী চাকুরীতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘সড়ক ও জনপথ দপ্তর’এ যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ দপ্তরের ‘অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী’ হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৫-৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রধান প্রকৌশলী’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি’র সহ-সভাপতি ও ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি’র আজীবন সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের সংগঠিত করে, আবার তাদের বিস্মৃত ধর্মে অর্থাৎ বৌদ্ধধর্মে ফিরিয়ে আনেন এবং রংপুরের মিঠাপুকুরে তাদের জন্য কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার “মিঠাপুকুর বেণুবন” বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ-স্থাপনা ও প্রাচীন কীর্তিসমূহ বিশদভাবে দেখেছেন। তাঁর এই কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে। এছাড়া তিনি অবসর জীবনে নিজেকে বৌদ্ধ কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর গবেষণা, বৌদ্ধচর্চা ও ধর্মভাবনা এবং বৌদ্ধ সাহিত্য ও ভ্রমণ কাহিনী রচনায় নিয়োজিত রেখেছেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরো ১৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।