২১টি উপন্যাস, ৭টি গল্পগ্রন্থ ও ৪টি প্রবন্ধগ্রন্থের রচয়িতা সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। সমকালীন রাজনৈতিক সংকট ও দ্বন্দ্বের উৎস ও প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে সেলিনা হোসেন এর বই সমূহ-তে। সেলিনা হোসেন এর বই সমগ্র অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, রুশসহ একাধিক ভাষায়। প্রবীণ এ লেখিকা ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের ১৪ই জুন রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। আদি পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীতে হলেও সেখানে বেশি দিন থাকা হয়নি তার। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাজশাহী চলে এলে সেটিই হয়ে ওঠে সেলিনার শহর। স্থানীয় এক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য পড়তে ভালোবাসতেন তিনি। আর ভালোবাসার টানে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সেলিনা হোসেন। এরপর সরকারি কলেজে শিক্ষকতা এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনেও কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি পত্রপত্রিকার জন্য চালিয়ে গেছেন তার কলম। টানা ২০ বছর তিনি ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেলিনা হোসেন মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস রচনা করে পাঠকমনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তার রচিত মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক কালজয়ী উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্রও। ‘যাপিত জীবন’, ‘ক্ষরণ’, ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’, ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’, ‘যুদ্ধ’, ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ (তিন খণ্ড) ইত্যাদি তার জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘স্বদেশে পরবাসী’, ‘একাত্তরের ঢাকা’, ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন’ ইত্যাদি তার জনপ্রিয় প্রবন্ধ। কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘কাকতাড়ুয়া’, ‘চাঁদের বুড়ি পান্তা ইলিশ’, ‘আকাশ পরী’, ‘এক রূপোলি নদী’ সহ বেশ কিছু সুপাঠ্য গ্রন্থ। সাহিত্যাঙ্গনে এই অনবদ্য অবদানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়াও তিনি ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার’, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ সহ অসংখ্য পদক পুরস্কার পেয়েছেন।
আমাদের পাঠ্য বইয়ে ‘বিজ্ঞান কী’ তার সংঙ্গা দেয়া আছে । কিন্তু সেই সংঙ্গার মর্মার্থ উদ্ধার করা বেশ দুরূহ কাজ । বিজ্ঞান বলতে আমাদের মনে বিজ্ঞানের যে ‘চেহারা’ ভেসে ওঠে তার বাইরে ‘বিজ্ঞান কী?’ এই কঠিন আলোচনাকে সহজ করে আলোচনা করেছেন দার্শনিক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিজ্ঞান কি ও কেন বইতে । দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই এর লেখক হিসেবে দুই বাংলায় পরিচিত । দেবীপ্রসাদ বিজ্ঞানকে আমাদের পাঠ্য বইয়ের মতো করে কোন ধরা বাঁধা নিয়মে বেঁধে রাখেন নি । বরং বিজ্ঞান কী তা বোঝাতে গিয়ে তিনি সহজ করে নানা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন । তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে সত্য মিথ্যা নির্ণয় করতে হবে । কিভাবে কু:সংস্কার, ফালতু ঘটনা বাদ দিয়ে একটি ঘটনাকে যাচাই করে দেখতে হবে। তিনি বলছেন বিজ্ঞানে প্রশ্ন করতে কোন বাঁধা নেই । বিজ্ঞানের বইতে ‘নিষিদ্ধ’ বলতে কোন প্রশ্ন নেই । বিজ্ঞান নিয়ত প্রশ্ন, যুক্তি, অনুমান, অনুসন্ধান, পরীক্ষা, নিরীক্ষা ইত্যাদির ভিতর দিয়ে এগিয়ে যায় । বিজ্ঞান তার সবকিছু সত্য প্রমাণ করে বলেই বিজ্ঞানের জ্ঞান সর্বত্র সত্য এবং সত্য হতে বাধ্য । বিজ্ঞান প্রত্যেক ঘটনার পেছনের কারণ খোঁজে, প্রমাণ চায় ।এ বইতে তিনি বিজ্ঞানকে শুধু ল্যাবরেটরী ঘরে আটকে না রেখে একে নিয়ে এসেছেন আমাদের চেনা জগতের আঙ্গিনায় । বইটির ভাষা ও ছবি খুব আকর্ষণীয় । সেই সাথে দেবীপ্রসাদের তীক্ষ্ণ যুক্তি, যুতসই উদাহরণ বইটিকে সহজ পাঠ্য করে তুলছে । ১২ থেকে ৯০ যে কোন বয়সী পাঠকের কাছে বইটি প্রয়োজনীয় মনে হবে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় কলকতা থেকে । আমাদের দেশে মুক্তধারা প্রকাশনী বইটির বাংলাদেশী সংস্করণ বের করে । এছাড়া গণগ্রন্থ প্রকাশনী ২০০৩ বইটির দশ টাকা দামের একটি সুলভ সংস্করণ বের করে । বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনীর সংস্করণের গায়ের দাম ৭২ টাকা । বইটি থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃতি করলাম: “বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে বাস্তব জীবনের কাজের তাগিদেই। আর বাস্তব জীবনের কাজের তাগিদই বিজ্ঞানকে বার বার নতুন উদ্দীপনা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।’’ “কর্মের কষ্টিপাথরে যে- জ্ঞানকে যাচাই করা যায় নি সে- জ্ঞান জ্ঞান নয়, তার কোন মূল্য নেই।” “আমাদের সাধারণ দেখাটায় প্রায়ই দেখার প্রতি নিষ্ঠা থাকে না, বৈজ্ঞানিকদের কাছে দেখবার সময় প্রধান কথা হলো দেখবার প্রতি নিষ্ঠা।” “বৈজ্ঞানিকেরা বলবেন, দুনিয়ার যেখানে যা-কিছুউ ঘটুক না কেন, তার একটা কারণ থাকতে বাধ্য। কোথাও কিছু অকারণে ঘটে না। কোন কিছুই খামকা ঘটে না; দৈবাত ঘটে না।”