‘রইসুদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ’ রফিক রহমান ভূঁইয়া’র লেখা একটি উপন্যাস! উপন্যাসটির নামকরণের মধ্যেই একটি চমক। প্রথমে এ নাম শুনে মনে হতে পারে এটি বোধ হয় একটি কলেজের ওপর লেখা বই। কিন্তু না বইটির প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে একটি কলেজকে কেন্দ্র নানা গল্পের নানা চরিত্রের সমাহার। বাংলা উপন্যাসের ধারা খুব সুদীর্ঘ কালের না হলেও ইতিমধ্যে বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে কালজয়ী অনেক উপন্যাস। যার সাহিত্যমান বিশ্বসাহিত্যের সাথে তুলনীয়। বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে বর্তমান হাল আমলের উপন্যাসিকদের মধ্যে থেকে যে সব উপন্যাস লিখিত হচ্ছে তা গর্ব করার মতো। হুমায়ূন আজাদ কিংবা হূমায়ুন আহমেদের মতো বিরল উপন্যাসিকদের উপন্যাস নিয়ে বাংলা সাহিত্য আগামীদিনে বিশ্বসাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আলোচিত উপন্যাস ‘রইসুদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ’ রফিক রহমান ভূঁইয়া’র এক অনন্য সৃষ্টি বলা যায়। কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষদের প্রেম ভালোবাবাসসহ নানা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে উপন্যাস রচিত হলেও কেবলমাত্র একটি কলেজের প্রশাসনিক কাঠামো অর্থাৎ একজন অধ্যক্ষ নিয়োগ আর তাকে বরণ করা নিয়ে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এ উপন্যাসের পটভূমি নির্মাণ করেছেন সুদক্ষভাবে উপন্যাসিক রফিক রহমান ভূঁইয়া। অধ্যক্ষ আসে আর অধ্যক্ষ যায়। খুব বেশি দিন কেউ স্থায়ী হয় না! কেন হয় না? কলেজের গভর্নিংবোডি, ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষকদের অবহেলা সব মিলিয়ে একটি আপত অচল কলেজের দায়িত্ব যখন কোন নতুন অধ্যক্ষের হাতে যায়, তখন তার কি ধরেণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় তার একটি চিত্র এই উপন্যাসের চিত্রায়িত হয়েছে। ‘কলেজে আজ নতুন অধ্যক্ষ যোগদান করতে আসছেন। কিন্তু সমস্যা হলো তাঁর চেয়ারের ওপরে দেওয়ার জন্য যে নতুন তোয়ালেটা কেনা হয়েছে, তা পাওয়া যাচ্ছে না। অধ্যক্ষের কক্ষে যে বেয়ারাটা কাজ করে, তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। উপাধ্যক্ষ হাসান সাহেব খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সবচে’ বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অফিস সুপার আলি আক্কাস সাহেব।’ উপন্যাসের শুরুতেই এমন একটি দৃশ্য আমরা দেখতে পাই। একটা তোয়ালে না থাকার মধ্য দিয়ে এই কলেজের বিশৃঙ্খলতার একটা ঈঙ্গিত দেন রফিক রহমান ভূঁইয়া। এ উপন্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র অনিতা প্রভা। যৌবনবতী, ঠাঁসবুননি শরীর। নাতিদীর্ঘগড়ন। প্রায় সর-পড়া দুধের মতোই গায়ের রঙ। টানা টানা তার কালো হরিণ চোখ। এতো সৌন্দর্য থাকলেও কাজের বেলায় ফাঁকিবাজ। কলেজের কর্মচারি হয়েও ছাত্রদের সাথে রসিয়ে রসিয়ে কথা বলা তার স্বভাব। আক্কাস আলী এ নিয়ে অনেক সর্তক করলেও কথা শোনার পাত্রী নয় অনিতা প্রভা। এ উপন্যাসে আক্কাস আলীকে আমরা একজন কর্তব্যপরায়ণ নীতিনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে দেখতে পাই। আসলে যে কোন সমাজে বা প্রতিষ্ঠানে এমন অনেক মানুষ থাকে যারা শুধু চাকরির জন্যই চাকরি করেন না। কাজকে ভালোবেসে চাকরি করেন। আর তাদের জন্য বিপদ। কাজের মায়ায় পড়ে থাকেন শত প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে, সহ্য করে। রফিক রহমান ভূঁইয়া’র লেখার দক্ষতায় চরিত্রগুলো অনেকটাই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। পাঠকদের মুগ্ধ করবে এ উপন্যাস সে কথা পাঠ শেষে বলা যায়।