বাংলা ছোট গল্পের ওপর রবীন্দ্রনাথের যে সংজ্ঞা রয়েছে তা মেনে অনেকেই তাদের গল্প চর্চায় নিয়োজিত আছেন। কিন্তু কেউ কেউ নতুন গল্পের আঙ্গিক, নতুন আকার, নতুন সংজ্ঞা দেয়ার প্রয়াস অব্যাহত রাখছেন। এটা খুবই ভালো দিক বলা যায় এ কারণে যে, সাহিত্য সব সময় বাঁক বদলে বিশ্বাসী। আর এ বাঁক বদলের পথে সবাইকে পাওয়া যায় না। কেননা গল্প এমনই একটি শিল্প মাধ্যম যে খুব সাবধানে একে সৃষ্টি করতে হয়। গল্প যেমন কাব্যিক হতে পারে তেমনি উপন্যাসের পথেও এর যাত্রা অকল্পনীয় কিছু না। শ্রাবণ নজরুলের গল্পের বই ‘তৃষ্ণা প্রহর’। বইটির গল্পসূচি- হারিয়ে খুঁজি প্রিয়, দেবীহনন, ভাঙা কবিতার গল্প, হঠাৎ বৃষ্টি, ধ্রুপদী ভয়, ছলবালিকা, পোস্ট করা হয়নি যে চিঠি ও তৃষ্ণা প্রহর। প্রতিটি গল্পেই রয়েছে আলাদা আলাদা চমক। গল্পের ভাষা বেশ কাব্যিক। চরিত্র কিংবা স্থান বর্ণনার ক্ষেত্রে গল্পকার খুব সচেতনভাবে শব্দের ব্যবহার করেন যা পাঠে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে বর্ণনাগুলো, চরিত্রগুলো। এ বইয়ের একটি ভালো লাগা গল্প ‘ভাঙা কবিতার গল্প’। সুপর্ণা একজন ধনী ব্যবসায়ীর স্ত্রী। কিন্তু তিনি কবিতা ভালোবাসেন। অপার আগ্রহ কবিকে নিয়ে। বাসার ছাদে পরিচয় হয় একজন কবির সাথে। যদিও কবি বয়সে তরুণ কিন্তু তার কবিতায় আছে গভীরতা। কোথায় যেন একটা প্রেমের রংধনু উঠে আবার মিলিয়ে যায় মেঘের আড়ালে! : সব কবিতা কি কাগজেই লিখা থাকে? কিছু কিছু কবিতা কি অন্য কোথাও লিখা বা আঁকা থাকতে পারে না? : আঁকা কবিতা?! : হ্যাঁ, আঁকা কবিতা। : কখনো দেখনি বুঝি? : কই, না তো। কেউ তো দেখায়নি কখনো। : আমি দেখাবো। : কখন? : আজই। : কিন্তু কোথায় সে কবিতা? : অর্ণক, তুমি না বললেও আমি জানি আমাকে নিয়ে তুমি কালির আঁছড়ে সাদা কাগজে অনেক কবিতা আঁকার চেষ্টা করেছ। অনেক বার। কী, করোনি? লজ্জাবনত দু’চোখ তুলে আমি ওনার দিকে চাইলাম। আর হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে সায় দেয়ার চেষ্টা করলাম। প্রত্যেকটি গল্পেই একটি দুটি চরিত্র নিয়ে একধরণের কৌতুহল, রহস্যময়তার সৃষ্টি করেছেন গল্পকার। গল্পের নামকরণেও মুন্সিয়ানা দেখা যায় এ বইটিতে। যেমন- ধ্রুপদী ভয়, ছলবালিকা কিংবা তৃষ্ণা প্রহর। প্রতিটি গল্পই বলতে গেলে এক নিঃশ্বাসে পাঠ করা যায়। শ্রাবণ নজরুলের জন্ম ফেনী জেলার দাগনভূঞায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স মাস্টার্স করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের বড় পদে কর্মরত থাকলেও সাহিত্যের প্রতি তার নিবেদন একনিষ্ঠ। বইটি প্রকাশকালে তার লেখালেখির বয়স খুব বেশি না থাকলেও লেখনির দক্ষতা তিনি ভালোই রপ্ত করছেন বলা যায়। বাংলা ছোট গল্পের অফুরন্ত ভাণ্ডারে ‘তৃষ্ণা প্রহর’ নিজেস্ব মহিমায় টিকে থাক পাঠকের প্রেরণায়, পাঠকের আনুকূল্যে।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত সে। জন্ম রাজধানী ঢাকার ইট পাথরের কঠিন দেয়ালে ঘেরা এক রুক্ষ পরিসরে হলেও বেড়ে ওঠা ফেনী, ফরিদপুর, যশোর, চট্রগ্রাম আর সেলেটের সবুজ শ্যামলীমায়্। পৈত্রিক বসতি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার নেয়াজপুর গ্রামে।