খেলাবিষয়ক রম্যগল্পঘরে ফেরার কথা মনে হতেই কেউ যেন সপাটে চড় মেরে বললো কোথায় যাবি? তোর তো ঘর নেই। হঠাৎ তার মনে হলো, জেলের ভিতরের পৃথিবীর চাইতে বাইরে পৃথিবী আরও বেশি নির্মম। নিষ্ঠুর। তার চেনা পৃথিবীকে বড় অচেনা লাগছে। নিজেকে যেন সে নিজেই চিনতে পারছে না। বিশ্বাস অবিশ্বাসের এক দ্বন্দ্বে খাঁচাবন্দি পাখির মতো ছটফট করে। দগ্ধে দগ্ধে মরে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চারদিক ভাল করে দেখে, ‘না, কেউ কোথাও নেই’ বড় নিঃস্ব মনে হলো তার। মাটিতে ধপাস করে বসে পড়ে, মাথা ঘোরে। একাকীত্বের যন্ত্রণার তীরগুলো বেশ সজোরে সারা শরীরে সুচের মতো ফুটতে থাকে। জেলের ভিতরে থাকার সময় কত স্বপ্ন দেখেছে সে। নতুন এক জীবনের স্বপ্ন। নতুন এক পৃথিবীর স্বপ্ন। সুদূর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, যেখানে শুধু আলো আর আলো। জীবনের গভীর আঁধার সরিয়ে আলোর স্বপ্ন। সমস্ত কালিমামুক্ত এক জীবন। ভুল শুধরে মানুষের মতো মানুষ হবে। মা বাবা বোন আত্মীয় স্বজনদের অপমান মুছে দেবে। একদিন আত্মগর্বে বলবে, তোমাদের রাহি খারাপ নয়, যা তোমরা ভেবেছে।’ সমস্ত নষ্ট সম্মান ফিরিয়ে দেবে কড়ায় গণ্ডায়। মুহূর্তের আবেগে একটা ভুল করেছে এ কথা সত্য, আইনের সাজা সে মাথা পেতে নিয়েছে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড। সাক্ষ্য প্রমাণে সে প্রকৃত অপরাধী। কিন্তু সাত বছরের জেল খাটার শাস্তির চেয়ে এই মুহূর্তের শাস্তি তার কাছে চরম অপমান কিংবা শাস্তি বলে মনে হলো। এর থেকে তার ফাঁসি হলে খুশি হতো সে।