সদ্যপ্রয়াত কবি অমিতাভ পাল ১৯৬২ সালে ৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পেশা জীবনে নানা ইলেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় দীর্ঘদিন কাজ করছেন। কর্ম যাই হোক না কেন তিনি কবিতা থেকে দূরে সরে যাননি। আমৃত্যু কবিতার সাথে বসবাস করেছেন কবি। কবিতা নিয়ে এ বইয়ে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন- ‘কবিতা আমাকে দেখা দিয়েছিল হঠাৎ করেই- অনেকটা রংধনুর মতো- অনেক বৃষ্টির পরেও যার দেখা মেলে না সহজে। বিশেষ কিছু শর্ত পূরণের পরেই ওই আশ্চর্য রঙের বাহার আকাশকে গ্রাস করে- আমাকেও করেছিল। মনে আছে সেই সন্ধ্যার কথা যেদিন সূর্য তার আলো গুটিয়ে নেয়ার পর বিরাট পাথরের মতো ঘন একটা অন্ধকার ভেঙে খান খান হয়ে অজস্র নুড়ি পাথরের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল চারপাশে এবং আমার চোখে গ্রথিত হয়ে গিয়েছিল একটা সন্ধ্যার জন্মদৃশ্যের ধারাবাহিক ফুটেজ। সেদিন আমি আবিষ্কার করেছিলাম প্রতীককে এবং তারপর নিজস্ব প্রতীকগুলি জন্মাতে শুরু করলোতো বটেই- অন্য কবিদের কবিতার প্রতীকগুলিও স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করলো।’ এ কাব্যগ্রন্থটির সূচিপত্র চারটি শিরোনামে বিভক্ত করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, নতুন বাল্বের আলো (১৯৮৯), আলোর আলোচনা (১৯৯২), আমার আত্মীয়স্বজন (১৯৯৮)। তার প্রথম কবিতার বই ‘নতুন বাল্বের আলো’ প্রকাশের পর আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছিলেন ‘এই কবির কবিতায় বাংলা কবিতার একটি নতুন ধারার সূচনা হয়েছে।’ কবিতায় শুদ্ধাচারে বিশ্বাসী অমিতাভ পাল এর কয়েকটি কবিতা পাঠ করা যাক- ‘বাংলাদেশের একটা এক টাকার নোটে সুন্দরবনের দৃপ্ত সাহসী হরিণদের ছবি আছে দুটি টাকার নোটে একটা সদাচঞ্চল দোয়েলের লেজের নাচন পাঁচ টাকার নোটে একটা সিংহ হৃদয়ের দরজা দশ টাকা জুড়ে একটা সুনিয়ন্ত্রিত বাঁধ পঞ্চাশ টাকায় স্বাধীনতা মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো আর একশ’ টাকায় চিরকালীন ধর্মভীরুতা জায়গা করে নিয়েছে।’ জুয়াররাত্রির ভোরে-পৃষ্ঠা-৬১ তোমার হাতে অবশেষে আমার মৃত্যু সম্পাদিত হলো তার আগে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলেছ তরকারীর খোসার মতো আমার সবুজ বন্যতা তারপর কেটে ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করে মিশিয়েছ পছন্দমাফিক নির্দিষ্ট মশাল এখন একটি যান্ত্রিক ভোজ ক্ষুন্নিবৃত্তি করে আমি এই মৃত্যু ভালবাসি? আমার মৃত্যু-পৃষ্ঠা-৪৪ কবি যেখানেই থাকুক কবিতা আমাদের মাঝে আছে। পাঠকের সিথানে, পাঠকের সেলফে, পাঠকের মন মননে কবিদের বাস। আর এই যোগ্যতা সবার হয় না। অমিতাভ পাল আপনি কবিতার থাকে ছিলেন-আছেন-থাকবেন।