‘রুবাইয়াত’ ও আমার কথা ফার্সি শব্দ ‘রুবা’ থেকে ‘রুবাইয়াত’। এর অর্থ ‘কবিতা’। ‘রুবাইয়াত’ বহুবচন। অর্থ ‘কবিতাবলী’। এ বিশেষ ধরনের কবিতা মূলত চতুষ্পদী হয়ে থাকে এবং তা ছন্দবদ্ধ। কিন্তু ছন্দকাঠামোতে আর এক বৈশিষ্ট্যÑ প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ পংক্তিতে অন্ত্যমিল। তা ছাড়া এধরনের কবিতার আর একটি বৈশিষ্ট্য এর স্বাতন্ত্র্য-স্বকীয়ততা। তা হচ্ছে, এর বিষয়বস্তুতে। স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পৃক্ততা। আশেক আর মাশুকের আত্মলীনতা। মাশুকের কাছে আশেকের আত্মসমার্পিত ঔদ্ধাত্মীয় (!) স্বাধিকার জিজ্ঞাসা, যা অতি সাধারণ অনুভূতিতে অমার্জনীয় অপরাধে সাব্যস্ত হতে পারে। বস্তুত বিষয়টা হচ্ছে, আশেক-মাশুকের প্রেম বা মহব্বতবিষয়ক। অতি সাধারণ প্রজ্ঞা আর অনুভূতিতে যা অনুপোলব্ধীয়। ফার্সি সাহিত্যের একটি অতি উল্লেখযোগ্য শাখা ‘রুবাইয়াত’। আর সে দেশে এ শাখার শ্রেষ্ঠতম কবি ওমর খৈয়্যাম। অসংখ্য রুবাইয়াত তিনি লিখেছেন তাঁর নিজের ভাষাতে, যা বিশ্বব্যাপী পরিচিত ‘রুবাইয়াতে ওমর খৈয়্যাম’ নামে। এরপরে উল্লেখযোগ্য রুবাইয়াত লিখেছেন মহাকবি ইকবাল। উর্দু ভাষায় তিনিও লিখেছেন অনেক রুবাইয়াত, যা ‘শেকওয়াহ্’ নামে পরিচিত। ওমর খৈয়্যাম আর ইকবালের রুবাইয়াতের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ওমর খৈয়্যাম আপন জিজ্ঞাসাকে পরিচ্ছন্ন অথবা স্বচ্ছতা করার জন্য আবদারি প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছেন স্রষ্টার সমীপে। তার জবাবের দায়িত্বভার দিয়েছেন পাঠকের মানস-আদালতে। পাঠককে ছেড়ে দিয়েছেন আত্মোপলদ্ধির ভাবনা- সমুদ্রে। আধ্যাত্মচিন্তার রসদ ঢুিকয়ে দিয়েছেন তাদের মস্তিষ্কপ্রজ্ঞায়। এখানে ইকবাল অন্যরকম। স্রষ্টার কাছে প্রশ্ন রেখে তার জবাব আবার তিনি নিজেই দিয়েছেন সাথে সাথেই। তাইতো তাঁর রুবাইয়াতের নাম দিয়েছেন ‘শেকওয়াহ্ আউর জওয়াব-ই- শেকওয়াহ্’।
আ. শ. ম. বাবর আলী জন্ম সাতক্ষীরা জেলার নলতা গ্রামে ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর। ১৯৫৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন নলতা হাইস্কুল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ. পাস করেন ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৮ সালে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. এড. পাস করেন। পরবর্তীতে বিসিএস। একটা বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে তাঁর চাকরি জীবন শুরু হয়। পরে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০০ সালে চাকুরি থেকে পুরোপুরি অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে মওলানা আকরাম খাঁ সম্পাদিত দৈনিক আজাদের মুকুলের মাহফিলে। পরবর্তীতে ইত্তেফাক, সংবাদ, পূর্বদেশ, সওগাত, মোহাম্মদী, সমকাল, মাহে-নও, ঝিনুক, সাতরঙ প্রভৃতি দৈনিক ও মাসিক পত্রিকাতে তাঁর লেখা প্রবন্ধ, গল্প, ছড়া, কবিতা ইত্যাদি নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। অনেকগুলো সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি পেয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম- সুমন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), সাহিত্যে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, ক্যাম্ব্রিজ, লন্ডন (১৯৯২), শিরি শিশুসাহিত্য সম্মাননা (১৯৯৩), কালিগঞ্জ সাহিত্য একাডেমি স্বর্ণপদক (১৯৯৯), কবি জসীম উদ্দীন পুরস্কার (১৪০৭ বঙ্গাব্দ), দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ স্মারক প্রতিবিম্ব পুরস্কার (২০০১), সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি স্বর্ণপদক পুরস্কার (২০০২), বাঁধনহারা লিটলম্যাগ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), অগ্রদূত সাহিত্য সম্মাননা (২০০৭),