“শরীরের গল্প" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ লাইটা অবশ্য আকবরকে সেই দিয়েছে। বছর খানেক আগে, তার বিয়ের মাস ৭/৮ পর আকবর এক সকালে কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল-ভাবি আমার একটা অনুরােধ রাখতে হবে। শুনি। আমাকে একটু জায়গা দিতে হবে।... প্লীজ ভাবি, না করবে না। জায়গা দিতে হবে মানে! এ বাসায় থাকবে? আরে ভাবি, তুমি দেখি কিছুই বােঝে না। শােনাে, আমার বান্ধবীকে নিয়ে একটু আসব। ডেটিং? ডেটিং। ঢাকা শহরে পাশাপাশি বসার জায়গারও বড় অভাব। তােমার ভাইকে বলে রাখব? আকবর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল আর জেসমিন হাসতে আরম্ভ করল। সে অবশ্য আকবরের অনুরােধ রাখল। পরদিন সকালে একটি মেয়েকে নিয়ে এল আকবর। তার এক ক্লাস নিচে পড়ে। যেমন মিষ্টি চেহারা, তেমন মিষ্টি কথাবার্তা। জেসমিন কিছুক্ষণ কথা বলল তাদের সঙ্গে। চা-নাস্তার ব্যবস্থা করল। তারপর উঠে এল। ড্রইংরুমের দরােজা বন্ধ করে আকবর আর সােহেলী নামের মেয়েটি প্রায় ঘণ্টাদেড়েক থাকল। জেসমিন, অস্বীকার করবে না, তার কয়েকবার ইচ্ছা করেছিল ওদের বন্ধ দরােজার কাছে গিয়ে দাড়াতে। এরকম কোনাে অভিজ্ঞতা নেই তার। থাকার কথাও নয়, কারণ প্রেমই নেই তার। কেন নেই? সে বন্ধ দরােজার কাছ থেকে ঘুরে আসার ইচ্ছা বাদ দিয়ে, কেন তার প্রেম নেই, এটা ভাবতে বসল। দিন পনের পর আকবর আবার ঐ আবদার ধরল-ভাবি, একটু জায়গা দিতে হবে। একটু কেন! জেসমিন বলল। জায়গা তাে অনেকটাই দেই। আকবর কিছু না বলে হাসল। পরদিন সে যে মেয়েটাকে নিয়ে। এল তাকে দেখে জেসমিন অবাক। সে জানত সােহেলী আসবে, সােহেলীর সঙ্গে আকবরের প্রেম, কিন্তু আজকের মেয়েটা অন্য একজন। সে কী করবে বুঝতে পারল না, আকবরকে আড়ালে পেল না যে জিজ্ঞেস করবে, মেয়েটাকে নিয়ে ঘণ্টা দেড়েক পরে আকবর যখন বিদায় হল, তখনও জিজ্ঞেস করা গেল না।
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।