ফ্ল্যাপে লিখা কথা ভাগ্য ফেরাতে হলে তোমাকে লক্ষণ বা সংকেত দেখার জন্য সজাগ থাকতে হবে। ঈশ্বর প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা পথ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন এবং সেই পথের লক্ষণ দেখিয়ে চলেছেন। ‘চোখ খোলা রাখলেই ঠিক পথে খুঁজে পাবে’। কিশোর কোনো কিছু বলার আগেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক ও সে যেখানে বসেছিল সেখানে কোথা থেকে যেন একটা প্রজাপতি এসে উড়তে লাগল। দৃশ্যটা দেখে পিতামহের বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল কিশোরের। তিনি বলতেন, ‘প্রজাপতি মানে শুভ লক্ষণ। ঝিঁ ঝিঁ পোকা, টিকটিকি, চার-পাতা বিশিষ্ট গাছের ডাল এরা সকলেই শুভ ঘটনার পূর্ববার্তা বহন করে আনে।’ এই কিশোরই হল স্পেন দেশের বাসিন্দা। সান্টিয়াগো তার নাম। সারা পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখার স্বপ্ন দেখে সে। যখনই কোনো ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টা তাকে বলেছে যে পিরামিডের কাছে গুপ্তধন তার জন্য অপেক্ষা করছে তখনই সে সাপের খোলস ছাড়ার মতো মর্তমান জীবন পরিত্যাগ করে ঝুঁকিভরা জীবনে প্রবেশ করবে বলে মনস্থির করেছে। কিশেঅরের এই দুঃসাহসিক অভিযান ও তার সবাত্মক রূপন্তর এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। উপন্যাসের চরিত্রগুলো হল কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি, যাযাবর, রাজা, সৈনিক, মরুবাসী এবং একজন সুবর্ণস্রষ্টা যিনি কিশোরকে স্বপ্নের খোঁজে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দেন এবং খোঁজ থেকে বিরত থাকলে যে হতাশা পরবর্তীকালে আসে তা বুঝিয়ে বলেন। কিশোরের জীবনে ভাগ্য ও উচ্চাশা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় এবং সে তার সামথ্র্যকে বাস্তবে রূপ দিতে চায়।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।