ভূমিকা বাংলাদেশ চীন গণমৈত্রী সমিতির সভাপতি জনাব আনোয়ারুর আমিন ও মহাসচিব জনাব এস এ সিকদার আমার বাসায় এসে বললেন, ‘চীন যেতে হবে। আপনি ছাড়া আর চার সহযাত্রী হবেন সাবেক রাষ্ট্রুদূত তোফেল কে হায়দার, প্রফেসর সি এম এ হায়দার, ব্যাংকার মুহাম্মদ শফিকুল আলম ও তরুণ উদ্যোগী প্রকাশের শিল্পপতি মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান সুমন।’ আমার চীন যাওয়ার কথা বহুদিনের। দিনক্ষণ ঠিক করতে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। আমার বড় মেয়ে বলল, ‘আব্বার কত দিনের ইচ্ছা!’ এমিরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান রস করে বললেন, ‘ম্যাক্সম্যূলার তো ভারতবর্ষে আসেন নি।’ তিনি জানতেন, চীনের ওপর আমার একটা উপক্রমণিকা বাংলা একাডেমীতে যন্ত্রস্থ রয়েছে। চীন থেকে ফিরে এসেছি। ক্যান্টেন রহমান একটা অনুরোধ করতে আমার বাসায় এলে তাঁকে চীনের চা পান করতে অনুরোধ করলাম। উনি আমার বাসা থেকে আমার সুহৃদয় অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর বাসায় গিয়ে আমা্র সম্বদ্ধে মন্তব্য করেন, ‘উনি তো এখন চিন্ময়।’ আমার চীনের পথে ১২ জন দুপুরে রওনা দিই এবং বেইজং-সাংহাই-কুনমিং ঘুরে ঘুরে ফিরি ১৮ জুন দুপুরে। সর্বসাকল্যে এই প্রায় ১৪৪ ঘণ্টায় চীন ‘খতম’ করা সম্ভব নয়। আমার যন্থস্থ মহাচীনের কথা বাংলা গ্রন্থের কিছু কথা ও তথ্য এ লেখায় অবলীলায় আমি ব্যবহার করেছি। বাংলাদেশ-চীন গণমৈত্রী সমিতি ও চীন বাংলাদেশ গণমৈত্রী সমিতি, কবি সাজ্জাদ শরীফ ও শিল্পী অশোক কর্মকারকে অশেষ ধন্যবাদ। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১ জানুয়ারি ২০১১
বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের একজন অন্যতম শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও বিচারক। ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মুহাম্মদ জহির উদ্দীন ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং আইনজীবী। শৈশব থেকেই রাজনৈতিক বিষয়াদি ও সংস্কৃতির দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর তাঁরা তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পরবর্তীতে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ. (সম্মান) এবং ১৯৫১ সালে এম.এ. পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। সহকারী এডভোকেট জেনারেল, হাইকোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৭৬ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একাধারে একজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ এবং অভিধানপ্রণেতা। তিনি একজন ভাষা সৈনিক; ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমূহ ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগেরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বই সমূহ হলো ‘রবীন্দ্র সম্বন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার (১৯৬৮)’, ‘যথা-শব্দ (১৯৭৪)’, ‘কোরআন সূত্র (১৯৮৪)’, ‘ভাষার আপন পর (২০১২)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০০৭) সহ আরো বেশ কিছু সম্মাননায় ভূষিত হন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমগ্র পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।