"আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭ম খণ্ড"বইটির সম্পর্কে প্রকাশকের কিছু কথা: প্রথম মানব-মানবী হযরত আদম ও হাওয়া (আ) থেকে মানব সভ্যতার শুভ সূচনা হয়েছে। হযরত আদম (আ) ছিলেন মানব জাতির আদি পিতা এবং সর্বপ্রথম নবী। আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির পর তাঁর বিধি-বিধান আম্বিয়ায়ে কিরামের মাধ্যমেই মানব জাতির কাছে। পৌছিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ সহীফা অথবা কিতাব নিয়ে এসেছেন। মানব ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা, আম্বিয়ায়ে কিরামের আগমন ও তাদের কর্মবহুল জীবন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাই ইসলামের নির্ভুল ইতিহাস জানার জন্য কুরআনহাদীসই হলাে মৌলিক উপাদান। আজ বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগেও কুরআন-হাদীসের তত্ত্ব ও তথ্য প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত। আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর (র) কর্তৃক আরবী ভাষায় রচিত ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া' গ্রন্থে আল্লাহ্ তা'আলার বিশাল সৃষ্টি জগতসমূহের সৃষ্টিতত্ত্ব ও রহস্য, মানব সৃষ্টিতত্ত্ব এবং আম্বিয়ায়ে কিরামের সুবিস্তৃত ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। ১৪ খণ্ডে সমাপ্ত এই বৃহৎ গ্রন্থটি অত্যন্ত নির্ভরযােগ্য ও জনপ্রিয় একটি ইতিহাস গ্রন্থ। ইসলামের ইতিহাস চর্চাকারীদের জন্য গ্রন্থটি দিক-নির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। গ্রন্থটির গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সবগুলাে খণ্ড অনুবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি সপ্তম খণ্ডের অনুবাদ। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সুবিধার্থে ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’র বাংলা নামকরণ করা হয়েছে ইসলামের ইতিহাসঃ আদি-অন্ত”। গ্রন্থটি অনুবাদ ও সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ত তাঁদের সবার প্রতি রইলাে আমাদের আন্তরিক মুবারকবাদ। অনূদিত গ্রন্থটির সপ্তম খণ্ড প্রকাশ করতে পেরে আমরা মহান আল্লাহ্ তা'আলার শুকরিয়া আদায় করছি। অপরাপর খণ্ডগুলােও প্রকাশের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গ্রন্থটির প্রুফ সংশােধনের মত জটিল ও শ্রমসাধ্য কাজে আনজাম দিয়েছেন মাওলানা আবু তাহের সিদ্দিকী। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে গ্রন্থটি প্রকাশ করতে গিয়ে হয়তাে কোথাও ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সচেতন পাঠকবৃন্দের নিকট কোন ভুল-ত্রুটি ধরা পড়লে তা আমাদেরকে জানানাের জন্য। অনুরােধ রইল। আমরা আশা করি গ্রন্থটি পাঠক মহলে সমাদৃত হবে। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন।
আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর জন্ম ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বসরার (বর্তমান সিরিয়া) মামলুক সালতানাতে। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী হলেও তিনি ইবনে কাছীর নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কুরায়েশ বংশের বনী হাসালা গোত্রের সন্তান। তার জন্মস্থান এবং জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তার শিক্ষাজীবন এবং শৈশব নিয়েও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে মামলুক সালতানাতেই তিনি বড় হয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ নিশ্চিত। কৈশোরে তিনি ফিরিঙ্গীদের যুদ্ধ, ক্রুসেড, তাতারদের আক্রমণ, শাসকদের অন্তর্কোন্দল, বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মতো যাবতীয় দুর্যোগ আর দুর্দশা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। কর্মজীবনে ইবনে কাছীর রহ. উন্মুসসা’ ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, গণিত সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেন। শায়খ তকী উদ্দী (রহঃ), উস্তাদ হাজরী (রহঃ), ইবনুল কালানসী (রহঃ) প্রমুখ প্রবাদত্যুল্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছিলেন মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানপিপাসুদের। ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে তার মৃত্যু হয়। আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ. এর বই সমূহ ইসলামি দর্শন, ফিকহ শাস্ত্র, তাফসির ও ইতিহাস নির্ভর। তার রচিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’-এর জন্য তিনি বিশ্বজোড়া সমাদৃত। পবিত্র কুরআনের কাছীরগুলোর মাঝে তার এই গ্রন্থটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং প্রামাণ্য। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘কিতাবুল আহকাম’ সহ বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ বই রয়েছে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর বই সমগ্রতে।