“রুটস্" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ আমাদের এখানে অল্প যে কয়েকজন নিষ্ঠাবান লেখক ও গবেষক আছেন তাদের মধ্যে জুলফিকার নিউটন অন্যতম। তাঁর লেখার সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন আমাদের জীবন যাত্রার, সমাজ ব্যবস্থার, ধ্যান ধারণার, ভাষা এবং সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধন জুলফিকার নিউটনের সাহিত্য চর্চার মূল্য উদ্দেশ্য। এই প্রয়াস সাধনে তাঁর রচনা দুটি প্রধান ধারায় বহমান। প্রথমটি সমাজের সমালােচনা, বিশ্লেষণ এবং রূপান্তরের উদ্দেশ্যে প্রবহমান, অন্য ধারাটি ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের সাধনায় নিয়ােজিত। জুলফিকার নিউটন একাধারে লেখক, গবেষক এবং অনুবাদক। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সাড়া জাগানাে কিশাের উপন্যাস ‘ইলাডিং বিলাডিং’ এবং প্রবন্ধ গ্রন্থ “শিল্পের নন্দনতত্ত্ব। তারপর থেকে তিনি নিরলসভাবে লিখে যেতে থাকেন যা আমাদের সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে। আমার বিশেষভাবে যেসব গ্রন্থের কথা মনে পড়ে তার মধ্যে রয়েছে-‘সত্যজিৎ সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন,' ‘শিল্প সাহিত্যে নজরুল, ‘লােকসংস্কৃতির শিল্পরূপ’, বঙ্গবন্ধু গান্ধী লেনিন, মরমী লালন ফকির, ‘সাহিত্যের সৌন্দর্য, নাটকের শিল্পশৈলী, বাংলা গদ্যের গন্তব্য,' কবিতার শিল্পতত্ত্ব, ‘সংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব,' ‘ননাবেল বিজয়ীদের জীবন ও সাহিত্য এবং বিশ্ববরেণ্যদের জীবন ও সাহিত্য প্রভৃতি গবেষণামূলক গ্রন্থ। জুলফিকার নিউটনের রচনায় আমরা নির্ভুলভাবে লক্ষ করি তার জিজ্ঞাসু মন এবং বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিশীলতা। জ্ঞান, মনন- বুদ্ধি ও ভাবচিন্তার শিল্পরূপ হচ্ছে প্রবন্ধ । সাহিত্য চর্চার সূচনায় জুলফিকার নিউটনের ধারণা ছিল জ্ঞানের বাহনরূপে প্রবন্ধই হচ্ছে সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পরূপ। সেজন্য তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনালগ্নে রচিত প্রবন্ধের সংখ্যা অন্যান্য সৃষ্টিশীল রচনার চেয়ে একটু বেশি। তারপর তিনি অবশ্য অনুবাদে অজস্রপ্রসূ হন। জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধ শুধু সহজ সামান্য কথায় জটিল প্রশ্নের আলােচনাই নয়, প্রবন্ধে যুক্তি ও তর্কের সঙ্গে বুদ্ধির পাশাপাশি রসের উপস্থিতিও। একাধিক লেখায় লেখক প্রবন্ধের সরসতার প্রতি তাঁর বিশেষ মনােযােগের কথা বলেছেন। সরসতা সত্ত্বেও তাঁর প্রবন্ধ রম্য রচয়িতার মেজাজে লেখা নয়। তথ্যনিষ্ঠ রচনা, মিস্টিক মনের দৃষ্টি দিয়ে লেখা। মােহমুগ্ধের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নয়। জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধ একই সঙ্গে সামাজিক ও সাহিত্যিক, সাময়িক ও যুগােত্তীর্ণ, সাবজেকটিভ ও অবজেকটিভ, সাহসী ও মরমি, স্বজ্ঞাযুক্ত ও যুক্তিপূর্ণ। তাঁর অধিকাংশ প্রবন্ধে লেখকের আদর্শ হল সবচেয়ে কম কথায় সবচেয়ে সহজ ও সরসভাবে প্রকাশ।
১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামের বনেদী কাজি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়ে কৃতিমান ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম শ্রেণীর সাথে অনার্সসহ এম.এ. ডিগ্রি এবং পরবর্তীতে বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনের ওপর উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসুর) সাবেক সাহিত্য সম্পাদক, সিনেট সদস্য, নন্দন পত্রিকার সম্পাদক এবং পরবর্তীতে দেশ বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, আমন্ত্রিত বক্তা, গবেষণা ও বিশেষজ্ঞতার ভূমিকায় সংযুক্ত ছিলেন। গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ এবং প্রবন্ধ-গবেষণা, সাহিত্যতত্ত্ব, দর্শন, সংগীত, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিক্ষেত্রেই জুলফিকার নিউটনের সংবিৎ সক্রিয় ও সুপ্রকাশ। তাঁর গল্প-উপন্যাস যেমন প্রীতিপদ, অনুবাদ সাহিত্য যেমন সুখপ্রদ, প্রবন্ধ ও গবেষণা তেমনই কোন না কোন দিক থেকে চমকপ্রদ। সব সময়ই তাঁর আলোচনায় থাকে চিন্তাকে উসকে দেবার মত অজস্র উপাদান, নতুনতর দৃষ্টি কোন বিচারে উদ্বুদ্ধ করার মত ক্ষুরধার বিশ্লেষণ। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ভিত্তিতে সাহিত্যে মৌলিক গবেষণা অনুবাদ ও জীবনবাদী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের জন্য আনন্দমেলা, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রংধনু স্বর্ণপদক, রূপসী-বাংলা স্বর্ণপদক, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, গান্ধী গবেষণা পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু একাডেমী, রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল একাডেমী, সুভাষচন্দ্র পদক এবং কবীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।