বাংলা নামের উৎপত্তি: প্রাচীনকাল থেকে বাংলা বিভিন্ন নামে অভিহিত হয়েছে। মূলত সমগ্র বাংলা বা বাংলাদেশে বা বঙ্গদেশের বিশিষ্ট কোন নাম ছিল না। প্রাক-মুসলিম যুগে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। এ কারণে বৈদিক যুগে আর্যগণ বাংলার সাথে পরিচিত ছিলেন বলে মনে হয় না এবং তাঁদের গ্রন্থ 'ঋক সংহিতায়' বাংলা শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায় না। সর্বপ্রথম বঙ্গ নামের উল্লেখ রয়েছে 'ঐতরেয় আরণ্যকে'। এই গ্রন্থে বঙ্গ কলিঙ্গ (উড়িষ্যা) জনপদের প্রতিবেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় 'ঐতরেয় আরণ্যকে' বঙ্গ বা বঙ্গবাসীদের সম্বন্ধে 'অশ্রদ্ধাসূচক' মন্তব্য পাওয়া যায়। বৈদিক যুগের শেষার্ধে রচিত কয়েকটি গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশ মগধ, চের ও বঙ্গ- এই তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। রামায়ণ ও মহাভারতে একাধিকবার বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওযা যায়। এই দুই মহাকাব্যে পুণ্ড্র (উত্তরবঙ্গ) যা বঙ্গ (দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গ), সুম্মা (পশ্চিমবঙ্গ), তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি স্থানের উল্লেখ রয়েছে। জৈনসূত্র আচারঙ্গ গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, পুণ্ড্র বা রাঢ় দেশ তখন সুম্মাভূমি ও বজ্রভূমি নামে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্যেও যে ষোলটি জনপদের উল্লেখ আছে তার মধ্যে বঙ্গ ও সুম্মা নামে দুটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়। 'অঙ্গুত্তরনিকায়', 'বৌদ্ধজাতক' ও 'দিব্যাবদনে বঙ্গ', রাঢ় ও পুণ্ড্রবর্ধনের উল্লেখ রয়েছে।