সেকালে হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে হেডমাস্টারবাবু বিদ্যালয়ের রত্ন বলিয়া যে তিনটি ছেলেকে নির্দেশ করিতেন, তাহারা তিনখানি বিভিন্ন গ্রাম হইতে প্রত্যহ এক ক্রোশ পথ হাঁটিয়া পড়িতে আসিত। তিনজনের কি ভালবাসাই ছিল! এমন দিন ছিল না যেদিন এই তিনটি বন্ধুতে স্কুলের পথে ন্যাড়া বটতলায় একত্র না হইয়া বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিত! তিনজনেরই বাড়ি ছিল হুগলির পশ্চিমে। জগদীশ আসিত সরস্বতীর পুল পার হইয়া দিড়া গ্রাম হইতে, এবং বনমালী ও রাসবিহারী আসিত দুইখানি পাশাপাশি গ্রাম কৃষ্ণপুর ও রাধাপুর হইতে। জগদীশ যেমন ছিল সবচেয়ে মেধাবী, তাহার অবস্থাও ছিল সবেচেয়ে মন্দ। পিতা একজন ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত। যজমানি করিয়া বিয়া-পৈতা দিয়াই সংসার চালাইতেন। বনমালীরা সঙ্গতিপন্ন জমিদার। তাহার পিতাকে লোকে বিত্তশালী ব্যক্তি বলিয়াই জানিত, অথচ পল্লীগ্রামের সরল জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতেন। রাসবিহারীদের অবস্থাও বেশ সচ্ছল। জমিজমা চাষবাস পুকুর-বাগান-পাড়াগাঁয়ে যাহা থাকিলে সংসার চলিয়া যায়, সবই ছিল। এ-সকল থাকা সত্ত্বেও যে ছেলেরা কোন শহরে বাসাভাড়া না করিয়া-ঝড় নাই, জল নাই, শীত-গ্রীষ্ম মাথায় পাতিয়া এতটা পথ হাঁটিয়া প্রত্যহ বাটী হইতে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করিত, তাহার কারণ, তখনকার দিনে কোন পিতামাতাই ছেলেদের এই ক্লেশ-স্বীকার করাটাকে ক্লেশ বলিয়াই ভাবিতে পারিতেন না; বরঞ্চ মনে করিতেন, এতটুকু দুঃখ না করিলে সরস্বতী ধরা দিবেন না। তা কারণ যাই হোক; এমনি করিয়াই ছেলে-তিনটি এন্ট্রান্স পাশ করিয়াছিল।
মিলন রায় জন্ম : ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ খ্রি.। জন্মস্থান : শ্রীপুর, তেরখাদা, খুলনা। বাবা : মন্মথরঞ্জন রায়।। মা : আশালতা রায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৯৩ সালে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৯ সালে এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপনা পেশায় নিয়ােজিত মিলন রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে বেড়াল মানবী (২০০২), আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ (২০০২), ছােটদের কবি সুকান্ত (২০০২), ছােটদের পল্লিকবি জসীম উদ্দীন (২০০২), পারস্যের কবি (২০০৩), রাজকুমারী সুমনা ও অহংকারী পিয়া (২০০৪), কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত : জীবন ও কাব্য (২০১৩), কথাসাহিত্য পরম্পরা : বঙ্কিম-শরৎ-মানিক (২০১৮), গাঁও-গেরামের গল্প (২০১৮) প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা পঁয়ত্রিশ।