মহাভারত-কথা “একদিন বিশ্লিষ্ট সমাজকে বাঁধিয়া তুলিবার জন্য এমন একটি পুরাতন শাস্ত্রকে মাঝখানে দাড় করাইবার দরকার হইয়াছিল যাহার সম্বন্ধে নানা লোেক নানাপ্রকার তর্ক করিতে পারিবে না— যাহা আর্যসমাজের সর্বপুরাতন বাণী।••• বেদ যদিচ প্রাত্যহিক ব্যবহার হইতে তখন অনেক দুরবর্তী হইয়া পড়িয়াছিল তথাপি দূরের জিনিস বলিয়াই তাহাকে দূর হইতে মান্য করা সকলের পক্ষে সহজ হইয়াছিল।•• আর্যসমাজের যতকিছু জনশ্রুতি খণ্ড খণ্ড আকারে চারি দিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল তাহাদিগকেও একত্র করিয়া মহাভারত নামে সংকলিত করা হইল। যেমন একটি কেন্দ্রের প্রয়ােজন তেমনি একটি ধারাবাহিক পরিধিসূত্রও তাে চাই— সেই পরিধিসূত্ৰই ইতিহাস। তাই ব্যাসের আর এক কাজ হইল ইতিহাস সংগ্রহ করা। আর্যসমাজের যতকিছু জনশ্রুতি ছড়াইয়া পড়িয়া ছিল তাহাদিগকে তিনি এক করিলেন। শুধু জনশ্রুতি নহে। আর্যসমাজে প্রচলিত সমস্ত বিশ্বাস তর্কবিতর্ক ও চারিত্ৰনীতিকেও তিনি এইসঙ্গে এক করিয়া একটি জাতির সমগ্রতার এক বিরাট মূর্তি এক জায়গায় খাড়া করিলেন। ইহার নাম দিলেন মহাভারত। ইহা কোনাে ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিবৃত্তান্ত। এই মহাভারতে কেবল যে নির্বিচারে জনশ্রুতি সংকলন করা হইয়াছে তাহাও নয়। আতসকাচের এক পিঠে যেমন ব্যাপ্ত সূর্যালােক এবং আর এক পিঠে যেমন তাহারই সংহত দীপ্তিরশ্মি, মহাভারতেও তেমনি একদিকে ব্যাপক জনশ্রুতিরাশি, আর-এক দিকে তাহারই সমস্তটির একটি সংহত জ্যোতি সেই জ্যোতিটি ভগবদ্গীতা। জ্ঞান কর্ম ও ভক্তির যে সমন্বয় যােগ তাহাই সমস্ত ভারত-ইতিহাসের চরম তত্ত্ব।”