“কেমন করে আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের কথা: লেখকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ : তারা সমস্যা দেখান কিন্তু সমাধানের পথ বাতলে দেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই প্ৰজাতির লেখক যারা সমাধানের পথও দেখান। উপদেশ দেওয়া যা গভীর সহানুভূতি এবং প্ৰজ্ঞাছাড়া দেওয়া যায় না। তাঁর জীবনবাদী গ্রন্থগুলিতে লেখক সেই উপদেশই দিয়ে আসছেন। তিনি অবশ্য বলেন, উপদেশ নয়-সাজেশান। মানুষকে চলার পথে প্রেরণা যোগাবার জন্য পৃথিবীর সব সাহিত্যেই বহু বই আছে। যাকে বলে “সাইকো-সাইবার নেটিক্স”। এই ধরনের বই লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়। বাংলায় পার্থবাবুই এই ধরনের গ্রন্থমালার সূত্রপাত করলেন, এবং ইতিমধ্যেই বহু পাঠকের উষ্ণ অভিনন্দন লাভ করেছেন। তার ছয় খণ্ডে প্ৰকাশিত হতাশ হবেন না” এখনও শত শত পাঠকের অভিনন্দন।ধন্য। কেমন করে আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন পাঠককে আত্মবিশ্বাসে দীপ্ত করার এক মহৎ প্রচেষ্টা। গল্প-উপন্যাস, কিশোর সাহিত্য নাটক, গবেষণা গ্ৰন্থ, সাংবাদিকতার ওপর গ্রন্থ, ভ্ৰমণকাহিনী রচনায় সিদ্ধহস্ত এইসব্যসাচী লেখক বাংলা মননশীল প্ৰবন্ধ-সাহিত্যকে আরও সুদূরপ্রসারী করেছেন। এখন বলা যেতে পারে বাংলা সাহিত্য শুধু ভোজের আয়োজনেই সীমিত নেই-শক্তির আয়োজনেও সে সমান সিদ্ধ। লেখকের কথা: আমার কাছে কাউনসেলিং-এর জন্য যাঁরা আসেন, তাদের অধিকাংশই বলেন তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। আজকে ভারতবর্ষে প্রতিযোগিতা ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সেই সঙ্গে চাকরি-বাকরির সুযোগ কমে আসছে। ব্যবসা করতে গেলে এখন যেন তেন প্রকারেণ ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা বৈতরণী পার করে দিতে পারলেই খুশি। ছাত্রদের মানসিক বিকাশের দিকে কেউ লক্ষ্য দিচ্ছেন না, না শিক্ষক, না অভিভাবক। কর্মজীবনে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, পুরাতন প্রযুক্তি রাতারাতি বাতিল হয়ে যা, ছ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই দাপাদাপির মধ্যে এসেছে বিশ্বায়ন। পশ্চিমবাংলার একটি অজপাড়াগাঁর ছেলেকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে সন্টুটগার্ড, কভেনটি কিংবা নিউজারসির একটি ছেলের সঙ্গে। কারণ বিশ্বে একটাই বাজার। সে বাজার তৃতীয় বিশ্বের লোক বলে কাউকে রেয়াত করেনা। তাই তৃতীয় বিশ্বের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আত্মবিশ্বানের অভাব। এই আত্মবিশ্বাসের অভাব আট থেকে আশি বছরের সবার মধ্যে দেখেছি। আমি কি পারব? এটি ভাবার সঙ্গে সঙ্গে অনেকরই মনোবল কমে যায়। কিন্তু সাহ৭ করে কাজে নামলে দেখা যায়। তারা পেরেছেন শুধু নয়, অনেকের চেয়ে ভাল পেরেছেন। নামতে ইতস্তত করতাম, তখন দেখতাম আমার মত অনেক শীতকাতুরে ছেলে আগে জলে গামছা ফেলে দিত। তারপর গামছাটা যখন ডুবে যাচ্ছে তখন গামছাটা উদ্ধারের জন্যই তারা জলে ঝাপিয়ে পড়ত। আমিও তাই করতে শুরু করলাম। স্নান করার পর দেখতাম আর শীত করছে না। সমস্ত ভয় আমাদের মনে। এই ভয়টুকু কাটিয়ে মনকে তৈরি করার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য প্রক্রিয়া আমি বর্ণনা করেছি। এই বই-এর প্রতিটি তথ্যই পরীক্ষিত ; শুধু তত্ত্ব কথা নয়, নিছক উপদেশ নয়। হতাশ হবেন না। ১ম খণ্ডে যার বীজ রোপণ করেছিলাম, এই বইতে সেই বীজ পত্রপুষ্পে পল্লবিত হয়েছে। এই বইতে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা হয়েছে যা কিছুটা আধ্যাত্মিক। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ও মানসিক অশান্তির কথা বলতে গেলে ভারতীয় দর্শনের কথা এসে পড়বে। সেই সঙ্গে আসবে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের কথাও। তবে এই আধ্যাত্মিক চিন্তা এখন পশ্চিমেও গৃহীত। তাই পশ্চিম এখন এই ভারতীয় চিন্তা সম্পর্কে আগ্রহী। পাঠকদের জানাই আমি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কার্যকালের মেয়াদ শেষ করে আবার কলকাতায় ফিরে স্বগৃহে বসবাস করছি। এখন থেকে আমি নিয়মিত আমার বাড়িতে কাউনসেলিং-এর ব্যবস্থা রেখেছি। পরামর্শ নেবার জন্য যে কোন পাঠক-পাঠিকাই স্বাগত। তবে আসার আগে টেলিফোনে (৩৩৭-৩৯১২) আমার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হবে। যারা চিঠি লিখবেন তারা অবশ্যই আট টাকার টিকিট দেওয়া ঠিকানা লেখা খাম পাঠাবেন। আমি ব্যক্তিত্বগঠনের ওপর জেলায় জেলায় যে ওয়ার্কশপ করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেটাও শুরু করতে চাই। তবে তার জন্য উৎসাহী পাঠক-পাঠিক আমার কাছে প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাবিত ওয়ার্কশপ হবে দুদিনের। তাতে থাকবে কেমন করে সুব্যক্তিত্বগঠন করবেন। আত্মবিশ্বাস, সাফল্য, কথা বলার আর্ট, ইন্টারভিউ, কেরিয়র কাউনসেলিং মোটামুটি হবে প্রস্তাবিত কৰ্মশালার বিষয়। ইতিমধ্যে ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ গঠনকে আন্দোলনের রূপ দেওয়ার জন্য আমার প্রস্তাবিত সংগঠনটি গঠন করা হয়েছে। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য আত্মবিকাশ তথা ব্যক্তির সর্বতামুখী উন্নয়ন। স্বামীজী যাকে বলতেন শরীর ও মনের শিক্ষা। আমি যাকে বলেছি, ‘পরিপূর্ণ জীবন’। এ জীবনে ভোগ যেমন থাকবে, তেমনি ভোগের সীমানাও বাঁধা থাকবে। ত্যাগও থাকবে পাশাপাশি। যে ভোগ করেনি সে ত্যাগ করবে। কী করে? এছাড়াও সংগঠনটির কাজ হবে তরুণ সমাজের মধ্যে মূল্যবোধের শিক্ষা আন্দালন প্রসারিত করা। এই আন্দালনের নাম দেওয়া হয়েছে মূল্যবোধ শিক্ষা আন্দালন Movement of Value Education (MOVE) যাঁরা নিজেকে এবং সেই সঙ্গে অন্যকেও বিকশিত করে তুলতে চান, র্তারা এই আন্দালনের শামিল হন।
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।