মানুষের জীবনকাল বড়জোর শতবর্ষ। এর অর্ধেকটাই যায় রাতে ঘুমিয়ে। বাকি অর্ধেকের অর্ধেকের পূর্বভাগ শৈশব, উত্তরভাগ বার্ধক্য। বাকি অংশ কাটে ব্যাধি, বিচ্ছেদজনিত দুঃখে ও অপরের সেবা করে। তরঙ্গের চেয়েও চঞ্চল মানুষের জীবন। তাহলে মানুষের জীবনে সুখটা কোথায়? প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ওপরের শ্লোকটি যিনি লিখেছিলেন, সেই কবি ভর্তৃহরি নিজের জীবনেও শান্তির সন্ধান পাননি। তিনি রাজপুত্র না হয়েও দৈবক্রমে একটি রাজত্ব পেয়ে যান। কিন্তু রাজ অধীশ্বর হয়েও ভর্তৃহরি শান্তি পাননি। শেষ পর্যন্ত রাজ্যপাট ছেড়ে শান্তির আশায় তিনি সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। সাংসারিক শান্তির ব্যাপারে কিছু লিখবার আগে ভর্তৃহরির জীবনটিকে একটি কেস স্টাডি হিসাবে ধরা যাক। তাহলেই বুঝতে পারবেন কোনও কিছুতেই মানুষের শান্তি নেই। ভর্তৃহরির বাবা গন্ধর্বসেনের দুই বিয়ে। প্রথম পক্ষের সন্তান ভর্তৃহরি। দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে বিক্রমাদিত্য। বিক্রমাদিত্যের মাতামহ একজন রাজা ছিলেন। ধারা রাজ্যের তিনি নৃপতি। গন্ধর্বসেন অকালে মারা গেলে তাঁর দুই নাবালক পুত্ৰ ভর্তৃহরি ও বিক্রমাদিত্যকে মাতামহ নিজের কাছে রেখে মানুষ করেন। মাতুলালয়ে ভর্তৃহরি নানা শাস্ত্রে পারঙ্গম হয়ে ওঠেন। কালক্রমে মাতামহ ধারারাজ তাঁর আপন দৌহিত্র বিক্রমাদিত্যকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনােনীত করেন। কিন্তু বিক্রমাদিত্য বলেন, আমার বড় ভাই থাকতে আমি রাজা হতে পারব না। তিনি ভর্তৃহরিকেই সিংহাসনে বসান। বিক্রমাদিত্য প্রধানমন্ত্রী থাকেন। রাজধানী স্থানান্তরিত হয় উজ্জয়িনীতে। কিন্তু রাজা হয়ে ভর্তৃহরি রাজধর্ম পালন করেননি। তা না করে তিনি অত্যধিক মাত্রায় স্ত্রৈণ হয়ে পড়েন।
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।