এই বইটি আমি লিখেছি ভারত ও বাংলাদেশের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কথা মনে রেখে তবে যে কোন বয়সের মানুষই এই বই পড়ে কিছু না কিছু অনুপ্রেরণা পাবেন। আমি যখন ইস্কুলে পড়তাম তখন আমাদের ইতিহাসের মাস্টারমশাই ছেলেদের পড়া না পারলে বলতেন : তোর কিচ্ছু হবে না। যা বাপের সঙ্গে লাঙল চষগে যা। . কাউকে বলতেন, যা গরু চরা—লেখাপড়া তোর জন্য নয়। আমাকেও তিনি বলেছিলেন, ক্লাস এইটের বেশি বিদ্যে আমার নাকি কপালে নেই। আমার মনের জোর ছোটবেলা থেকে একটু বেশি বলে আমি এসব কথায় কান দিইনি। পৃথিবীতে সব সময় দুধরনের লোক থাকে। একদল হল ইতিবাচক লোক যারা সব সময় উৎসাহ দেন আর আর একদল সব সময় সব কিছুতে লোককে নিরুৎসাহ করেন। ‘এটা হয় না’। ‘এটা অসম্ভব'। ‘ওর কিছু হবে না। ওটা একটা গাধা।” এইসব নিরুৎসাহবাচক কথা শুনে বহু ছেলেমেয়ে হতোদ্যম হয়েছে। অনেক ছেলেমেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। এইসব নানা ঘটনা দেখে আমি ঠিক করি আমি একটা আন্দোলন গড়ে তুলব যার উদ্দেশ্য হবে ছেলেমেয়েদের শুধু উৎসাহিত করা। বিশেষ করে শুনে শুনে যাদের মধ্যে ধারণা হয়েছে তারা অপদার্থ। আমি -বলতে চাই পৃথিবীতে কোন প্রাণীই অপদার্থ নয়। প্রত্যেকেরই একটা না একটা ভূমিকা আছে। কীটাণুকীটের জীবনও সৃষ্টি হয়েছে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। প্রকৃতি থেকে তুমি যদি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়াকেও নির্মূল করে দাও তাহলে ঘোরতম বৈষম্য সৃষ্টি হবে। মানুষ তো সে তুলনায় শ্রেষ্ঠ জীব। তার দুটো হাত আছে, দুটো পা আছে। আর আছে অপরিসীম বুদ্ধি। প্রত্যেক মানুষ এসেছে একটি উদ্দেশ্য সাধন করতে। তারতম্য তাদের মধ্যে থাকতেই পারে। তবে অনুশীলন করে বুদ্ধিও বাড়ানো যায়। ইতরপ্রাণীর যে সুযোগ নেই। তারা বুদ্ধির চর্চা ও অনুশীলন করতে পারে না। এজন্য সমস্ত প্রাণীর বুদ্ধি একই রকমের। গাধা যদি বোকা হয় তাহলে সব গাধাই বোকা। কিন্তু সব মানুষ সমান বোকা, সমান চালাক নয়। বহু চালাক মানুষ এক এক পরিস্থিতিতে বোকা বলে যায় বা বোকার মত কাজ করে।
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।