মহাকালের সােনার তরীতে সােনার-ধান তুলে দেওয়ার দুর্লভ সৌভাগ্য খুব কম জাতিরই হয়েছে। সভ্যতার প্রথম প্রভাতে, এই পরম গৌরবের অধিকারী। হওয়ার সৌভাগ্য যারা লাভ করেছে, তাদের মধ্যে গ্রীসের নামটি শুধু যে বিশেষ ভাবেই উল্লেখযােগ্য তাই নয় চিরস্মরণীয়। প্রাচ্যে ভারতবর্ষ, প্রতীচ্যে গ্রীস, সােনার তরীতে দর্শন-বিজ্ঞান-সাহিত্যের সােনার ধান থরে-বিথরে সাজিয়ে দিয়েছে। বাস্তবিকই ভৌগােলিক বিস্তারের দিক দিয়ে, গ্রীস সত্যই একখানি ছােট্ট ক্ষেত, কিন্তু সেই ছছাট্ট ক্ষেতখানিতে মানব-মনীষার সােনার ফসল ফলেছে বিস্ময়কর প্রাণ-প্রাচুর্য নিয়ে। গ্রীস তাই মানব-সংস্কৃতির অন্যতম আদি পীঠস্থান।
এ কথা সত্য বটে যে গ্রীসের দিগ্বিজয়ী রাজশক্তির মহিমা ‘সন্ধ্যারক্তবাগসম তন্দ্রাতলে’ লীন হয়ে গেছে। গ্রীসের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা আজ নগণ্য এবং সে হিসাবে গ্রীস আজ মৃত। কিন্তু তবু গ্রীস কীতিশরীরে আজও জীবিত, আজও মহিমান্বিত। একথা সত্য জগৎ-সভায় সামরিক সন্ধি-বিগ্রহের ব্যাপারে আজ গ্রীসের কোন বড় আসন নেই, এসব সভায় কেউই আজ তাকে সভয়ে স্মরণ করে না; কিন্তু একথাও সত্য যেখানেই সংস্কৃতির স্মরণােৎসব, সেখানেই গ্রীসের জন্য একখানি উচ্চ আসন সংরক্ষিত আছে। গ্রীসের গৌরব তার রাজশক্তির মহিমায় নয়, গ্রীসের গৌরব তার দার্শনিকের ও কবির কীর্তিকলাপে-তার জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্পকলার স্মরণীয় উৎকর্ষে। গ্রীস প্রমাণ করেছে-‘তস্য হি জীবিতং শ্রেয় মনননন হি জীবতি’-মনন দিয়েই গ্রীস মৃত্যুকে জয় করেছে।