"ইতিহাসে বিজ্ঞান" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সেই হাতে-গড়া পাথুরে কুঠারের যুগ থেকে শুরু করে আজকের এই হাইড্রোজেন । বােমা আর জিন-প্রযুক্তির যুগ পর্যন্ত সমাজ আর বিজ্ঞান কীভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করে চলেছে, তার গতিসূত্রটি প্রথম ব্যাখ্যা করেন প্রসিদ্ধ ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জন ডেসমন্ড বার্নাল—তার সায়েন্স ইন হিষ্টি গ্রন্থে, যা পৃথিবীর অন্তত সতেরােটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিজ্ঞান বলতে বার্নাল শুধু প্রকৃতি-বিষয়ক বিজ্ঞানকেই বােঝাননি—সমাজবিজ্ঞানও তার গবেষণার অন্তর্গত। তিনি দেখিয়েছেন, ধর্ম, দর্শন, মনস্তত্ত্ব, অর্থনীতি, শিক্ষাবিজ্ঞান-এ সমস্তই নির্দিষ্ট যুগের, নির্দিষ্ট শ্রেণীর চাহিদা অনুযায়ী বিকশিত হয়েছে। বিজ্ঞানের পশ্চিম-কেন্দ্রিকতার তত্ত্বকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে বার্নাল দেখিয়েছেন, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয়, মিশরীয়, চৈনিক, ইসলামি বিজ্ঞান কীভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের অতুলনীয় সৌধটিকে গড়ে তুলেছে। সবশেষে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই এত বড় সৌধ যে গড়ে উঠল, মানুষের সমাজ তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার যােগ্য তাে? সমাজকে সেই যােগ্যতা অর্জন করতেই হবে, নইলে মানুষের এত বড় সাধনা বিফলে যাবে—মনীষী বার্নালের শেষ বার্তা এই। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই বই সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে; দেখবার চোখ, বােঝবার মন তৈরি করে দিয়েছে। মানুষের মুক্তি অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ। শােণিতে-স্বেদে অবলিপ্ত সেই চিরচলমান মুক্তি-আন্দোলনে বার্নালের এই নৈবেদ্যটি অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে, থাকবে।
জন ডেসমন্ড বার্নাল-এর জন্ম ১৯০১। আয়ার্ল্যান্ডের নিনেগ-এ শিক্ষা: পদার্থবিদ্যা (ক্রিস্ট্যালোগ্রাফি), ইম্যানুয়েল কলেজ, কেমব্রিজ। বহু বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের জন্য ‘সেজ' ডাকনামে সর্বপরিচিত। কর্মজীবন: ১৯৩৩ সালে পেপসিন-এর কেলাস-চিত্র গ্রহণ তাঁর স্মরণীয় কাজ। টোব্যাকো মোজেক ভাইরাসের গঠন নিয়ে তাঁর গবেষণা ও বহু-সমাদৃত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চিফ অব কম্বাইন্ড অপারেশনস-এর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টারূপে নর্মান্ডি উপকূলে মিত্রশক্তির ঐতিহাসিক অবতরণের সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও শাস্তি আন্দোলনের প্রবক্তা। ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব পিস-এর সভাপতি (১৯৫৮-৬৫)। বিজ্ঞানের ইতিহাস-চর্চার ‘এক্সটার্নালিস্ট' ঘরানার অন্যতম প্রতিভূ। বহু পুরস্কারে সম্মানিত ফেলো অব দি রয়্যাল সোসাইটি, ১৯৩৭; রয়্যাল মেডেল, ১৯৪০; মেডেল অব ফ্রিডম উইথ পাম্স (আমেরিকা, ১৯৫৩); লেনিন শান্তি পুরস্কার, ১৯৫৩; প্রোশিয়াস মেডেল, ১৯৫৯। প্রয়াণ: ১৯৭১।