"বিবেকানন্দ চরিত" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে স্বামী বিবেকানন্দের আবির্ভাব। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের আশীর্বাদধন্য এই মহামানব ধর্মে-সমাজেরাষ্ট্রে সমষ্টি মুক্তির মহান আদর্শ প্রচার করেন। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে-ফেলা একটি জাতিকে যেন পুনর্জাগরিত করেছিলেন তিনি। ভারতবাসীকে দান করেছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে-ওঠার মন্ত্র। বিবেকানন্দের নানাবিধ জীবনচরিত প্রকাশিত হলেও মানুষটির তীব্র ও বিচিত্র জীবনপ্রবাহকে গ্রন্থাকারে ধারণ করা সহজ কাজ নয়। সাংবাদিক-সাহিত্যিক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার এক্ষেত্রে সফল পথ-প্রদর্শক কয়েক দশক আগে প্রকাশিত সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের। ‘বিবেকানন্দ চরিত’ আজও বাঙালি পাঠকের প্রিয় গ্রন্থ। সন্ন্যাস গ্রহণ করা এই কর্মবীরের শৈশব থেকে শুরু করে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সান্নিধ্য লাভ, ভারত ভ্রমণ, আমেরিকার ধর্মমহাসভায় বক্তৃতাদানের মাধ্যমে বিশ্বজয়, বেলুড় মঠ স্থাপন, অতিরিক্ত পরিশ্রমহেতু স্বাস্থ্যভঙ্গ–অনুপম। সব জীবনতরঙ্গ যেন প্রবাহিত এই গ্রন্থে। জীবনহীন মৃতের দেশে স্বামীজি যে এক সৃষ্টিশীল জীবনাবেগের অধিকারী ছিলেন, এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় তারই অনুপুঙ্খ চিত্রণ। “বিবেকানন্দ চরিত’ নিছক জীবনী নয়, গ্রন্থটি। এক মহামানবের প্রাণস্পর্শে উদীপ্ত করে পাঠককে।
সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের জন্ম ১৮৯২, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইলে। পিতা মহিমচন্দ্র মজুমদার। আচার্য ব্রজেন্দ্রলাল শীলের সঙ্গ পেয়ে তিনি অধ্যয়নে বিশেষ মনোনিবেশ করেন। কলকাতা এসে বেলুড় মঠে কিছুদিন যাতায়াতের পর শ্রীশ্রীমায়ের নিকট দীক্ষিত হন। স্বামী সারদানন্দের উৎসাহে শুরু করেন স্বামীজির জীবনচরিত রচনা। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ। দেশবন্ধু সম্পাদিত ‘নারায়ণ’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক ছিলেন কিছুকাল। সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও বিশেষ ঘনিষ্ঠতা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকা প্রকাশিত হলে সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান। পরে প্রায় ২০ বছর এই পত্রিকার সম্পাদক। এছাড়াও যুক্ত ছিলেন ‘স্বরাজ’, ‘সত্যযুগ’, ‘অরণি’ পত্রিকার সঙ্গে। ১৯৫১ সালে রাশিয়া ও ইউরোপ ভ্রমণ। ছদ্মনাম : নন্দীভৃঙ্গী। কয়েকটি গ্রন্থ: বিবেকানন্দ চরিত, স্বাধীনতার দাবী, স্ট্যালিনের জীবনী, রূপযুদ্ধ, আমার। দেখা রাশিয়া, স্বৈরিণী (উপন্যাস), জওহরলালের আত্মচরিত (অনুবাদ)। প্রয়াণ: ১৬ অক্টোবর ১৯৫৪।