"সুন্দরবন : জীব পরিমণ্ডল" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা কথা: এক ভয়ংকর সুন্দর, অনন্য, অদ্বিতীয় অরণ্যের নাম সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম গাঙ্গেয় পেব-দ্বীর দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন এক বিস্তীর্ণ বনভূমি। এই অরণ্যের বৃক্ষরাজি, নদনদী, বন্যপ্রাণী ও বিভিন্ন নরগােষ্ঠীর ইতিহাস ও জীবনপ্রবাহের আলেখ্য এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন সুন্দরবন-বিশেষজ্ঞ লেখক। এই অরণ্য ও অরণ্যচারীরা এবং এর পরিবেশ আজ নিদারুণ বিপদের সম্মুখীন। জীবিকা ও বাসস্থানের জন্য মানুষের হস্তক্ষেপে এই বনের প্রায় অর্ধেক আজ নিঃশেষিত। বেশ কয়েকটি প্রাণী ও ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ বিলুপ্তির সীমানায় দাড়িয়ে।। অসামান্য এই প্রাচীন অরণ্য-পরিবেশে প্রবাহিত প্রধান নদীগুলি এবং অসংখ্য ছােট ছােট নদী-খাঁড়ি, খাল-বিল মানুষের নির্বিচার ব্যবহার ও অত্যাচারে দূষিত। আবার প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক রুদ্ররােষে সুন্দরবন বিপর্যস্ত। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এখানকার লক্ষ লক্ষ অসহায় দরিদ্র মানুষ গৃহহারা। আরও বিপজ্জনক ঘটনা, ভূ-প্রাকৃতিক কিছু কারণে সুন্দরবন তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের প্রধান জলের উৎস গঙ্গানদী তার জলধারাকে পশ্চিম থেকে ক্রমে নিয়ে যাচ্ছে পূর্ব দিকে পদ্মানদীর খাতে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সুন্দরবনের প্রাণসত্তাকে রক্ষা করার জন্য চিন্তা-ভাবনা-প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই অরণ্য আজ বিলীয়মান। পনেরাে বছর আগে ভারত সরকার সুন্দরবন অঞ্চলকে জীব পরিমণ্ডল রূপে ঘােষণা করা সত্ত্বেও আমরা এই সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হইনি। এই অরণ্যকে ভালবাসতে না পারলে, ভিতর থেকে চিনতে-জানতে-বুঝতে না পারলে হয়তাে সুন্দরবন হারিয়ে যাবে আমাদের জীবন থেকে। এই গ্রন্থ সমগ্র সুন্দরবনের একটি বিশ্বস্ত চিত্রের সম্মুখে আমাদের দাড় করিয়ে দিয়েছে। যে-চিত্র আমাদের সচেতন করবে, অরণ্যপ্রেমী করে তুলবে।