"তিন গোয়েন্দা ভলিউম-১১"বইটির প্রথমের কিছু কথা: কাপড় খুলল কুমালাে। লম্বা, শক্ত, বাদামী শরীর, যেন নারকেলের কাণ্ড। দেয়ালের গা থেকে। উপসাগরের ওপর বেরিয়ে থাকা একটা পাথরে গিয়ে দাঁড়াল। পরনে সাঁতারের পােশাক বলতে কিছু নেই, হাতে শুধু দস্তানা। ধারাল প্রবাল থেকে তার আঙুল বাঁচাবে ওগুলাে। খসখসে খােসাওয়ালা। ঝিনুক খামচে ধরে তুলতে সুবিধে হবে। ডুব দেয়ার জন্যে তৈরি হতে লাগল সে। ভুবুরিরা এই পদ্ধতিটাকে বলে ‘টেকিং দ্য উইণ্ড' বা বাতাস নেয়া। দম নিতে আরম্ভ করল সে, একটা থেকে আরেকটা আরও ভারি, আরও লম্বা। ঠেলে, জোর করে। বাতাস ঢােকাচ্ছে ফুসফুসে। সেই বাতাস আটকে রাখতে বাধ্য করল ফুসফুসকে। তারপর আস্তে করে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল পানিতে। ঝাঁপ দিল না বলে আলগােছে শরীরটাকে ছেড়ে দিল বলা ভাল। মাথা নিচু করে ডাইভ দেয়নি। সােজা হয়ে পড়েছে। পা নিচের দিকে দিয়ে নেমে যাচ্ছে খাড়া। - এভাবে নেমে গেল দশ ফুট। তারপর ডিগবাজি খেয়ে ঘুরিয়ে ফেলল শরীরটা, এবার মাথা নিচে পা ওপরে। একই সঙ্গে হাত পা নাড়ছে, কাছিমের মত। | পানির নিচে সাঁতারের অনেক দৃশ্য দেখেছে মুসা, সে নিজেও ভাল.সাঁতারু। কিন্তু এরকম দৃশ্য কখনও দেখেনি। ডুবুরির পােশাক ছাড়া তিরিশ ফুট নিচে নামতে পারলেই ধন্য হয়ে যায় ইউরােপিয়ান কিংবা আমেরিকান সাঁতারুরা, চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। ওই গভীরতায়ই পানির প্রচণ্ড চাপ পড়ে শরীরের ওপর। নিচের পানি ওপরের দিকে ঠেলতে থাকে, পারলে গ্যাসভর্তি বােতলের মুখের কর্কের মত ফটাস করে ছুঁড়ে মারতে চায়। - কিন্তু কুমালাে পরােয়াই করল না চাপের। নেমে যাচ্ছেচল্লিশ ফুটপঞ্চাশ ---ষাট। | ‘আমার বিশ্বাস, এর ডবল নিচে নামতে পারবে ও,' কিশোের বলল। সাঁতার জানে বটে পলিনেশিয়ানরা। | ‘হ্যা, যােগ করল রবিন। বয়েস দু’বছর হওয়ার আগেই সাঁতার শিখে ফেলে। হাঁটা শেখার আগে সাঁতার শেখে অনেক পলিনেশিয়ান শিশু। ডাঙা আর
রকিব হাসান বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা ও কিশোর-কিশোরীদের সেরা পছন্দের লেখকদের শীর্ষ তালিকার একজন। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা গোয়েন্দা কাহিনি ও তিন গোয়েন্দা সিরিজের সাথে পরিচিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি বহু ক্লাসিক ও কিশোর রোমহর্ষক সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। লেখালেখির দীর্ঘ ৫০ বছরে চারটি প্রজন্ম অতিবাহিত হলেও আজও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। মূলত তিনি নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন বিধায় মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশ বিদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ পাঠকশ্রেণি রয়েছে। যাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনী এবং পরবর্তী প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের কাছেও রকিব হাসান অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। বর্তমান প্রজন্মের পাঠক-ভক্তদের কাছেও ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্রটি অসম্ভব জনপ্রিয়। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও কিশোর-কিশোরীসের সেরা পছন্দের এই গুণী লেখকের জন্ম কুমিল্লায়, ১৯৫০ সালে। মূলত এক সময়ে পাঠকের হাতে স্বল্পমূল্যে বই তুলে দিতে এবং নিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে ‘পেপারব্যাক সংস্করণে’ প্রকাশিত স্বনামে-বেনামে তাঁর লেখা বহু বই তিন দশক ধরে বেস্টসেলার ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। আজও তাঁর প্রকাশিত বইগুলো সমান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সকল কিছুকে ছাপিয়ে তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্র কালজয়ী জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। স্বনামে-বেনামে ও ছদ্মনামে এই তিন ক্যাটাগরিতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় কোন ছেদ পড়েনি। তিনি সকল ধরনের মিডিয়া ও প্রচার প্রচারণাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতেন বলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই লেখকের ফেসটি তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় দেখেছি যে, যখন কোন পাঠক একটু জানতে পেরেছেন যে, রকিব হাসান বইমেলায় অমুক প্রকাশনীতে আছেন, তখন একে একে নিমিষেই প্রচÐ ভীড়ের সৃষ্টি হতো। এমনকি পাঠকের ভীড়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে যেতো। এই গুণী লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক। তাঁর লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে, ছদ্মনামে। স্বনামে প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল অনুবাদগ্রন্থ, ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’। এরপর অনুবাদ করেছেন জুল ভার্ন, জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন, মার্ক টোয়েন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, ফ্রেড জিপসন, রেনে জুঁইঅ, এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মত বিখ্যাত লেখকদের অনেক ক্লাসিক বই। অনুবাদ করেছেন মহাক্লাসিক ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’ ও এডগার রাইস বারোজ- এর ‘টারজান’ সিরিজ। তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের নিয়ে রচিত ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজটি। এই সিরিজের তিনটি মূল চরিত্র ‘কিশোর-মুসা-রবিন’কে নিয়ে লিখেছেন আরও তিনটি সিরিজ ‘তিন বন্ধু’, ‘তিন কিশোর গোয়েন্দা’ ও ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন’। লিখেছেন ‘কিশোর গোয়েন্দা’ সিরিজ ‘খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ, জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ। এ ছাড়া কিশোরদের জন্য বেশ কিছু ভূতের বই ও সাইন্স ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখা কিশোর-কিশোরীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে এবং সেরা বিনোদন যোগায়। আমরা এই গুণী ও অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখকের সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। মহান আল্লাহপাক আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করুন। আমীন।