পূর্বকথা বিচারপতি হযরত মাওলানা তাকী উপমানী সাহেবকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তানের উপমা যদি কোথাও দিতে হয়, তা হলে মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. এবং তদীয় পুত্র মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানীকেই পেশ করা যায় নির্দ্বিধায়। হযরত উসমানী দামাত বারাকাতুহুম দীনের যেই খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন, তা বহুবিধ। অবিরাম লিখে যাচ্ছেন। যাচ্চেন ও অবিরাম। তার সেই মুখের বলাটাও সারা দুনিয়ার মানুষের জণ্য চলার পথের পাথেয় হচ্ছে তার বক্তৃতামালা। উর্দু তাঁর মাতৃভাষা। তবে আরবী, ইংরেজিও চালাতে পারেন মাতৃভাষার গতিতে। কাজেই এখন তার লেখার বাহন হয়েছে শেষোক্ত ভাষা দুটি। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁর লেখা এবং বক্তৃতাসংকলন বই হয়ে বাজারে আসতে দেরী, বিভিন্ন ভাষায় তা অনূদিত হতে দেরী হয় না। আল-হামদু লিল্লাহ, বাংলা ভাষায়ও তার বহু লেখা এবং বক্তৃতা অনুবাদ হয়েছে। ইসলাহী খুতুবাত তাঁর এক অনবদ্য বক্তৃতা সংকলন। এরও বঙ্গানুবাদ হয়েছে। তবে বাংলা তর্জমাকারী নবীনদের একটি বড় দুর্বলতা সহজ ক্ষেত্রেও অকারণে মূলানুগামিতা বর্জন। এতে যে বক্তৃতার রস নষ্ট হয়, সেদিকে দৃষ্টি নেই কারও। এজন্য ইসলাহী খুতুবাতের প্রকৃষ্ট অনুবাদ হওয়া দরকার মনে করে আমি একটি কার্যক্রম হাতে নিই। ক’জন বন্ধুকে দায়িত্ব অর্পণ করি অনুবাদ করার জন্য। তারা অনুবাদ করে জমা দেন আমার কাছে। কিন্তু তাদেরও সমস্যা দেখি একটাই; স্রোত ব্যাহত করা। তাদের সেই স্রোতবিঘ্নিত অনুবাদ গতিশীল করতে আমাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। যা হোক, আল্লাহ তৌফীক দেওয়ার কারণে কাজটি সমাধা করতে সক্ষম হয়েছি। এখন সেই অনুবাদ পাঠকের হাতে যাচ্ছে, একজন লেখক হিসাবে এর চেয়ে আনন্দের খবর আমার কাছে আর কী হতে পারে? প্রত্যেক বইয়ের লেখা/সম্পাদনা শেষ করার পর আরও কিছু কাজ বাকি থাকে। যেগুলো কম্পোজারকে সমাধা করতে হয়। বিশিষ্ট আলেম জনাব মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন অত্যন্ত যত্নের সাথে সেই কাজগুলো আঞ্জাম দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে উত্তম জাযা দান করুন। এই উপস্থাপনার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল বয়ানগুলো বিষয়ভিত্তিকভাবে তরতীব দেওয়া হয়েছে। এতে উলামায়ে কেরাম এবং মাদরাসার ছাত্ররা বিশেষ সাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন বলে আশা করি। আল্লাহ সংশ্লিষ্ট সবার মেহনত কবুল করুন। এই খেদমতকে আমাদের নাজাতের উসিলা করুন। আমীন।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।