ফ্ল্যাপে লিখা কথা প্রতিটি ভাষায় ও দেশে অসংখ্য প্রবাদ ও উদ্ধৃতি প্রচলিত। সভ্যতার প্রারম্ভ থেকে মানুষ এদের উদ্ভাবন ও সংগ্রহ করে আসছে। শিক্ষা ও বিনোদনসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগযুগান্তরের ক্রমবর্ধমান অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতার সোনালী ফসল হচ্ছে প্রবাদ ও উদ্ধৃতি। এগুলোর নিগূঢ় তাৎপর্য ও মর্মার্থের যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রয়োগের ফলে সমাজ উপকৃত হয়। পৃথিবীর নানা অংশে বসবাসরত নরনারীর চিন্তাচেতনার সাদৃশ্য সংগৃহীত এই সব মূল্যবান প্রবাদ ও উদ্ধতি থেকে সহজেই প্রতীয়মান। এসবের যথাযথ ব্যবহার ব্যক্তিগত, সামাজিক জীবনকে আনন্দদায়ক ও উন্নত করতে সহায়ক হবে। নির্বাচিত প্রবাদ ও উদ্ধতি পাঠকের সময়োপযোগী ও সঠিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে গদ্যে ও পদ্যে দেশী বিদেশী নানাজাতীয় নতুন-পুরাতন প্রবাদ ও উদ্ধতির সমাহার।
ভূমিকা অনাদিকাল থেকে বংশ পরম্পরায় অর্জিত ও সঞ্চিত প্রগাঢ় জ্ঞান ও মূল্যবান অভিজ্ঞতার সোনালী ফসল প্রবাদ ও উদ্ধৃতি। এগুলোতে অন্তর্নিহিত আছে বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাভাবনার নির্যাস। সভ্যতার পথে আগুয়ান মানুষেরা নানারকম অবস্থা ও পরিস্থিতির মোকাবেলায় কল্যাণধর্মী বহুমুখী অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করে। এ ভাবেই সৃষ্টি হয়েছে প্রবাদ ও উদ্ধৃতির বিশাল ভান্ডার । নিজেদের ছাড়াও পরবর্তী বংশধরদের জন্য, এগুলো অতি মূল্যবান মুক্তার মত। এ থেকে শুধু প্রণেতাদের ব্যক্তিজীবনই নয়, এদের দেশ কাল সম্পর্কেও অবহিত হওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট প্রবচন ও বাণীসমূহের সঠিক প্রয়োগ সমৃদ্ধ জীবন গড়নে ভূমিকা রাখে। কোনো কোনোটি যথেষ্ট আনন্দদয়ক। এদের সঠিক ব্যবহার কথোপকথন ও বক্তব্যকে সুন্দর করে। এ কথায়, জীবনকে অর্থবহ ও মানসম্পন্ন করতে প্রবাদ ও উদ্ধৃতির ভূমিকা যথেষ্ট। নিজেদের আরো ভালোভাবে প্রকাশ করার তাগিদে মানুষ প্রবাদের আশ্রয় নিয়ে থাকে। বহু উদ্ধৃতি এতই পরিচিত যে সেগুলো প্রবাদের মত ব্যবহৃত হয়। প্রবাদ ও উদ্ধৃতির তারতম্য পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের নিকট স্পট হতে পারে , কিন্তু বাকীদের নিকট নয়। নিঃসন্দেহে এগুলি চিন্তার খোরাক যোগায় ও হাসির উদ্রেক করে। পাঠকের সুবিধার জন্য কোন কোন বাংলা প্রবাদ ও উদ্ধৃতির সমার্থক ইংরেজী প্রবাদ, উদ্ধৃতি বা অনুবাদ স্থান পেয়েছে; কোথাও কোথাও “cf" (Compare) ব্যবহার করে ইংরেজীতে তুলনীয় ভাবার্থ দেয়া আছে। ক্ষেত্রবিশেষে বোঝার সুবিধার্থে বাংলায় ভাবার্থ বা ব্যাখ্যা এই চিহ্নের <> ভেতরে উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে লেখকের নাম এবং কোথাও কোথাও শিরোনাম সন্নিবেশিত ।
এটিএম শামসুল হকের কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়। হতে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স), আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এমএ, এবং এলএলবি ডিগ্রী লাভ করার পর তিনি আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া ও যুক্তরাজ্যের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। শামসুল হক ঢাকা কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাসে একমাত্র তিনিই পর পর | নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি। প্রাক্তন সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) এর সদস্য হিসেবে, এটিএম শামসুল হক বাংলাদেশ সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি আট বছর আন্তঃসরকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র সিরডাপ-এর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন । তা ছাড়া কেবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিন বছর বাংলাদেশ সরকারের পার্ক (পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফরম কমিশন) এর। চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর শেষ ছয় দশকের পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রেখাচিত্র সংবলিত শামসুল হকের প্রথম গন্থ আত্মজীবনীমূলক মােজাইক অব মেমােরিজ (Mosaic of Memories)। তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ সিলেক্টেড প্রভার্বস এন্ড কোটেশনস (Selected Proverbs & Quotations) ইংরেজী ভাষায় প্রবাদ ও উদ্ধৃতি নিয়ে রচিত। বাংলাদেশে এটি সম্ভবত এ ধরণের প্রথম পুস্তক।