ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা ভালোবাসা, আমি তোমার জন্য কাঁদছি, বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম, আমার একটা দুঃখ আছে আর ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল-এই চারটা পাঠকপ্রিয় উপন্যাস নিয়ে এ-বই। যে-হাসিবাড়িতে সাধারণ কেউ কাঁদে না, সেখানে একদিন হঠাৎ করে শোনা গেল কান্নার আওয়াজ। হাসিখুশি তরুণী অপি কাঁদছে।দাদি বললেন, নিশ্চয়ই তুই প্রেমে পড়েছিস। প্রেমে পড়লেই কেবল লোকে এইভাবে কাঁদে। ভালোবাসা, আমি তোমার জন্যে কাঁদছি-র শুরুটা এ-রকম। হৃদয়-তোলপাড়-করা দু’কূল ছাপানো প্রেমের এ-আখ্যান কিন্তু শেষ-পর্যন্ত পরিণত হয় ফাঁদের গল্পে। যে-ফাঁদ নিয়তির, এবং ইতিহাসের। বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম এমন একটা। শহরের গল্প, ইঞ্জিনিয়ার যেখানে ইট ভেঙে খায়, ডাক্তার ফেরি করে ওষুধ বেচে। বেকারত্বেময় সে-শহরে এক তরুণের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এক তরুণীর। পরিচয়পর্ব থেকে ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু তাদের মধ্যখানে বাধার নানা তারকাঁটা; উন্নয়নের নামে, প্রকল্প-কর্মসূচির নামে কত প্রতারণা।এ-আখ্যান আসলে আমাদের স্থানকালেরই বয়ান। আমার একটা দুঃখ আছে এক গল্পগুওয়ালার গল্প, যে সারারাত জেগে তৈরি করে গরম গরম গল্পপিঠা আর সারাদিন দুঃখী গলায় ডেকে ফেরে-গল্প নেবেন, গল্প। সেই গল্প তাকে দেয় অর্থ, খ্যাতি, নারীর হৃদয়, প্রেম-নানা রকম।সাফল্যের শিখর স্পর্শ করার পরও গল্পওয়ালার মনে রয়ে গেছে আরো এক বিপন্ন বিস্ময়, কী যেন এক দুঃখ। কী সেই দুঃখ? ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল-এ তরুণ শামসুল কবির একদিন টেলিফোনে পেয়ে যার এক আশ্চর্য নারীকে, যে-নারী, তার কাছে মনে হয়, কবিতার মতো বিশুদ্ধ। কিন্তু এ-পৃথিবীতে সম্পূর্ণ শুদ্ধ কোনো কিছু কি পাওয়া সম্ভব? শুদ্ধ প্রেম, শুদ্ধ পেশা, নরনারীর বিশুদ্ধ সম্পর্ক? একাধারে কবিতার তীব্র রোমান্টিকতা ও আবেগ, কথাসাহিত্যের নির্মোহ বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি, তারই সঙ্গে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ-রসবোধ, কল্পনার আকাশছোঁয়া বিস্তার-সব মিলিয়ে এই বই পাঠকের সামনে খুলে দেয় অপূর্ন আনন্দের এক অনির্বাচনীয় জগৎ।
সূচিপত্র *ভালোবাসা, আমি তোমার জন্যে কাঁদছি *বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম *আমার একটা দুঃখ আছে *ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।