"তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন (প্রথম খণ্ড)"বইটির ভূমিকা: আমাদের উপর কুরআন মাজীদের বহু হক রয়েছে। তারমধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হকসমূহ নিম্নরূপ ১. কুরআন মাজীদের প্রতি পরিপূর্ণ উপলব্ধির সাথে ঈমান আনা। এ ঈমানের কয়েকটি দিক আছে, যথা (ক) বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এটা আল্লাহ তা'আলার কালাম যা তিনি তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিল করেছেন। এ কিতাব যে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ এবং এর প্রতিটি বাণী সত্য, এবং প্রতিটি শিক্ষা যথার্থ এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এক উজ্জ্বল আলাে যা ছাড়া অন্ধকার থেকে মুক্তির আর কোনাে পথ নেই। এই কুরআন এক আসমানী পথনির্দেশ যা ছাড়া বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তি থেকে আত্মরক্ষার আর কোনাে উপায় নেই। এই কুরআন হল ফুরকান যা সত্য-মিথ্যা, আলাে-অন্ধকার, ন্যায়অন্যায় ও সুপথ-কুপথের মাঝে পরিষ্কার পার্থক্যকারী। এতেও কোনও সন্দেহ নেই যে, নাযিলের সময় থেকে আজ অবধি এ কিতাব যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, বর্তমানে গ্রন্থাকারে যে কুরআন আমাদের হাতে আছে, যা সূরা ফাতিহা দ্বারা শুরু হয়ে সূরা নাস এ সমাপ্ত হয়েছে, এটাই আল্লাহ তা'আলার সেই কিতাব যা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিল হয়েছিল এবং এর ভাব ও ভাষা এবং এর বিধান শিক্ষা ও তা পালনের পদ্ধতি, যা কিছু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পালনকর্তার আদেশে উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন সবকিছু হুবহু সংরক্ষিত আছে। (খ) বিশ্বাস রাখতে হবে যে, মানুষের হিদায়াত ও সফলতা কুরআনের প্রতি ঈমান আনার মধ্যেই নিহিত। এ ঈমানের মাধ্যমেই মানুষ তার স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করতে ও আখেরাতের মুক্তি পেতে পারে। যে ব্যক্তি এ কুরআনকে নিজের দিশারী ও আদর্শ রূপে গ্রহণ করবে দোজাহানের সফলতা কেবল তারই নসীব হবে। (গ) কুরআনের প্রতি ঈমান কেবল তখনই গ্রহণযােগ্য হবে, যখন সম্পূর্ণ কুরআনের প্রতি ঈমান আনা হবে। কুরআন মাজীদের কিছু বিধান মানা ও কিছু না মানা এবং কুরআন মাজীদকে জীবনের ক্ষেত্র বিশেষে সিদ্ধান্তদাতা বলে স্বীকার করা, ক্ষেত্রবিশেষে স্বীকার না করা, সম্পূর্ণ কুফ্ৰী আচরণ। গােটা কুরআনকে অস্বীকার করা যে পর্যায়ের কুফ্র এটাও ঠিক সে রকমেরই কুফ্র।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।