"তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন (তৃতীয় খণ্ড)"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: الحمد له وسلامه على عباده اليري اضطفی أما بعد . আলহামদুলিল্লাহ! তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন'-এর অনুবাদ শেষ হল। এটা যে কত বড় আনন্দের বিষয় এবং আমার পক্ষে কত বড় খােশনসীবী তা কোন্ ভাষায় প্রকাশ করব! কিভাবেই বা আমি তােমার শােকর আদায় করব হে আল্লাহ! নাকি তা করা সম্ভব? এ কাজের সূচনা ও সমাপ্তি ততা কেবল তােমার ইচ্ছারই প্রতিফলন! না হয় এই মহা অকর্মণ্য ও আপদমস্তক গুনাহগারের কী সাধ্য ছিল তােমার পাক কালামের খেদমতে সম্পৃক্ত হবে? এ কেবল তােমারই দয়া হে মালিক! কেবল তােমারই করুণা। প্রিয় পাঠক! তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনের বাংলা অনুবাদ করার প্রয়ােজন কেন অনুভূত হল, হযরত মাওলানা আব্দুল মালেক ছাহেব এ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় তা তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তার দ্বারা অনুরূদ্ধ হয়েই আমি এ গ্রন্থের অনুবাদে হাত দিয়েছি। বস্তুত তাঁর অনুরােধ আমার পক্ষে আদেশ অপেক্ষাও বেশি কিছু এবং আমার জন্য এটা অনেক বড় গৌরবের বিষয়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সিহত ও আফিয়াতের সাথে দীর্ঘজীবী করুন এবং উম্মতের ইলমী ইমামতের জন্য কবুল করে নিন। উল্লেখ্য, এত বড় কাজে আমার হাত দেয়ার মত ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন করার কথা নয়। কারণ অন্যসব বিষয়ে চরম উদাসীন হলেও নিজ যােগ্যতার দৈন্য সম্পর্কে আমি বেখবর নই। কিন্তু কুরআন মাজীদের খেদমতে জড়িত থাকার কিছু না কিছু লােভ তাে মুমিন মাত্রেরই অন্তরে থাকে। সেই সঙ্গে যদি থাকে হযরত মাওলানার মত ব্যক্তিত্বের প্রনােদনা এবং থাকে একদল যােগ্য উলামা বন্ধুর প্রেরণাদায়ী উচ্চারণ, তবে কঠিন থেকে কঠিনতর কাজেরও হিম্মত জাগে বৈকি! স্বাভাবিকভাবেই এ আশ্বাস তাে ছিলই যে, এ কাজে তাদের সকলের পূর্ণ সহযােগিতা থাকবে এবং আমার যত ক্রটি-বিচ্যুতি ও অসুন্দরতাই ঘটুক তা তাদের সাহায্যে মেরামত করার সুযােগ পাব। সুতরাং সেই আশায় বুক বেঁধে, আল্লাহ মালিকের উপর ভরসা করে অনুবাদের কাজ শুরু করে দেই। শুরু করার পর দেখি, গ্রন্থের নাম যদিও ‘আসান তরজমায়ে কুরআন কিন্তু বাংলায় তা অনুবাদ করা অতটা আসান নয়। শ্রদ্ধেয় গ্রন্থকার উর্দুবাকশৈলী অনুযায়ী সাধারণ ও প্রাথমিক স্তরের পাঠকদের সামনে রেখে কুরআন মাজীদের সহজ-সরল তরজমা করেছেন এবং সতর্ক থেকেছেন। যাতে সে তরজমা কুরআনী শব্দমালা ও তার ব্যঞ্জনা থেকে দূরে সরে না যায়। অনুবাদককে তাে মূল লেখকেরই অনুগমন করতে হয়। কাজেই আমাকেও লক্ষ্য রাখতে হয়েছে তরজমা যেন বাংলা বাকশৈলী অনুযায়ী হয়, সাধারণ পাঠকদের উপযােগী সহজ-সরল হয় আবার তাতে থাকে মূল গ্রন্থকারকৃত তরজমারই প্রতিধ্বনি। কাজটা যে কত দুরূহ তা আমার মত অল্পপুঁজির ভুক্তভােগীই
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।