ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের মঙ্গোলীয় আবিদাবসী গ্রন্থে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত কতিপয় মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর মানুষের আত্ম-পরিচয়, সাংস্কৃতিক-নৃতাত্ত্বিক অভিধা তুলে ধরা হয়েছে। অবিচ্ছিন্ন ধারায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে কালক্রমে বাঙালি জাতির সৃষ্টি করেছে। বাঙালিরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সকল পরিচিত জাতিগোষ্ঠী, প্রধানত নিষাদ-ভেড্ডিড, মঙ্গোলীয়, আর্য দ্রাবিড়ীয় প্রভৃতির সংমিশ্রণজাত একটি সঙ্কর জাতি হলেও তাদের পাশাপাশি স্বতন্ত্রভাবে এদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস রয়েছে মঙ্গোলীয় মানবগোষ্টীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের সঙ্কর বাঙালির জনসভা পরিগ্রহ করেছে এক নিজস্ব নৃতাত্ত্বিক রূপ ও পরিচয়। আর এরই মাঝে পাশাপাশি বসবাসরত মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীভুক্ত বেশ কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি বা আদিবাসী মানুষেরা একীভূত হয় নি। বরং ধর্ম-বর্ণ ও সাংস্কৃতিক ভেদাভেদ সত্ত্বেও সকল সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে তারা প্রাচীনকাল থেকেই স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে বসবাস করছে।
মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠী ছড়িয়ে আছে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশের সমতল ও পার্বত্য এলাকায়ও শাখা বিস্তার করেছে মঙ্গোলীয়রা। বিশেষত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের এগারটি আদিবাসী নৃগোষ্ঠী যথাক্রমে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, খেয়াং, চাক, পাঙ্খেয়া ও লুসাই, কক্সবাজার ও পটুয়াখালী রাখাইন; বৃহত্তর ময়মনসিংহের গারো, হাজং, ডালু; বৃহত্তর সিলেটের মনিপুরী ও খাসিয়া এবং উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ও কোচরা মঙ্গোলীয় মহানৃগোষ্ঠীভুক্ত এক একটি ক্ষুদ্র জনসমাজ।
মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর মানুষদের চুল হয় সোজা, খড়খড়ে ও কালো মাথার আকার গোল। নাক মাঝারি হতে চ্যাপ্টা, তবে নিগ্রোয়েডদের মতো মাংসল নয়। চোখের উপরের পল্লব ঝুলে থাকে সামনের দিকে। চোখের পাতায় থাকে বিশেষ ধরনের ভাঁজ। মঙ্গোলীয়দের দাড়ি, গোঁফ থাকে না বললেই হয়। চোখ ধূসর বা গাঢ় ধূসর। গায়ের বড় পীতাভ বা পীভাভ-বাদামি। বাঙালিদের সঙ্কর বৈশিষ্ট্যর সাথে মঙ্গোলীয়দের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে সমতুল করা যায় না। মাঝারি দেহ-প্রকৃতির বাঙালিরা নৃতাত্ত্বিকভাবেই আলাদা। বাঙালিরা পাঁচমিশালি হয়েও স্বতন্ত্র এবং এই অর্তে মঙ্গোলীয়দের চা্ইতে পৃথক। পার্থক্য খোলা চোখেই স্পষ্ট বলে একজন মঙ্গোলীয় চাকমা, গারো বা রাখাইন একজন বাঙালি হতে নিজেকে পৃথক ভাবে এবং একজন বাঙালিও সে অর্থে এদের সাথে নিজেকে একাকার বা অনুরূপ ভাবে না।
এই গ্রন্থে বাংলাদেশে বসবাসরত মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীভুক্ত কতিপয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তা তথা চাকমা, গারো হাজং, মারমা, রাখাইন, ত্রিপুরা ম্রো, কোচ ও রাজবংশীদের আত্মপরিচিতি তথা তাদের সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম ও বিশ্বাসবোধ, আচার-আচরণ, উৎসব, আর্থ-সামাজিক পটভূমি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষকরা লিখেছেন, যা এদেশের মঙ্গোলীয় রক্তধারার মানুষদের নতুনভাবে পরিচিত করতে মূল স্রোতের বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে।
কবি ও গবেষক মুস্তাফা মজিদ এর রয়েছে ১০টি কাব্যগ্রন্থ। যথাক্রমে- ‘মেঘবতী সুবর্ণভূমি, “তােকে নিয়ে প্রেম প্রেম খেলা, কুসুমিত পঞ্চদশী’, ‘পুষ্পপত্রে নীলকণ্ঠ’, ‘জনযুদ্ধের কনভয়, ‘সাকিন সুবিদখালী’, ‘স্বাতীর কাছে চিঠি’, Diary of a Nepalese Guerrillas সম্পাদিত কবিতাসমগ্র ঃ মাও সেতুঙ এবং নিবেদিত কবিতা সংকলন ‘প্রাণিত রবীন্দ্রনাথ’ । এই কবি কবিতা লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসরত। মঙ্গোলীয় ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে লােক প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র নিয়েও গবেষণা করে আসছেন। বাংলাদেশের রাখাইন জাতিসত্তার আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক সমীক্ষা নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। যা বাংলাদেশের রাখাইন’ শিরােনামে বাংলা ভাষায় বাংলা। একাডেমী এবং The Rakhaines শিরােনামে ইংরেজি ভাষায়। ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । ড. মুস্তাফা মজিদের এ পর্যন্ত রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা। ৪০ উর্ধ্ব। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপুরা জাতি। পরিচয়’, ‘পটুয়াখালীর রাখাইন উপজাতি', আদিবাসী রাখাইন’, ‘মারমা জাতিসত্তা' বাংলাদেশে মঙ্গোলীয়। আদিবাসী’, ‘গারাে জাতিসত্তহজং জাতিসত্তা’, আদিবাসী সংস্কৃতি (১ম ও ২য় খণ্ড), রূপান্তরের দেশকাল’, ‘সমকালের আত্মকথন’, ‘লােক প্রশাসনের তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ’, ‘বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র', 'রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্র’, ‘নেতৃত্বের স্বরূপ’, বাংলাদেশে বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘মুক্ত ও মুগ্ধদৃষ্টির রবীন্দ্র বিতর্ক’ । আর ছােটদের জন্য রচিত ও সম্পাদিত গল্প গ্রন্থ। ‘দীপুর স্বপ্নের অরণি’, ‘জীবন থেকে’ ও ‘ছােটদের ৭টি মঞ্চ নাটক’ এবং জীবনী গ্রন্থ ‘রূপকথার নায়ক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন’ ও ‘বঙ্গবীর ওসমানী। মার্কসীয় মুক্ত চিন্তার যৌক্তিক দৃষ্টবাদে অবিচল মুস্তাফা মজিদ কৈশােরে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে। অংশগ্রহণসহ কৈশাের থেকেই নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। জড়িত । বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ছায়ানট, ঢাকা থিয়েটার ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। এছাড়াও তিনি সত্তর ও আশির দশকে শিশু-কিশাের। সংগঠন গড়া ও নাট্য আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন । পেশায় প্রথমে সাংবাদিকতা এবং পরে ১৯৮৪ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত আছেন। বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক ড. মুস্তাফা মজিদ ১৯৫৫ সালের ১৪ই এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার সুবিদখালীতে জন্মগ্রহণ করেন । ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানী, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড।