বই পরিচিতি সত্তরের দশকের শুরুতে পুকুর, নদীনালার পানি পান করার ফলে কলেরা, ডায়রিয়ার মত পানিবাহিত রোগের প্রকোপে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ যখন জর্জরিত, সে সময় দেশি-বিদেশি জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টাদের সুপারিশে সরকার সারাদেশে অসংখ্য গভীর নলকূপ স্থাপন করে তার থেকে খাবার পানি পানে দেশের মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলেন। কেউ তখন পরীক্ষা করে দেখেননি এই পানিতে ক্ষতিকর কোন খনিজ আছে কিনা। ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ ধীরে ধীরে কমে আসে ঠিকই, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের প্রায় দুই দশক পর আবিষ্কৃত হয় যে, দেশের অনেক অঞ্চলর নলকূপই আর্সেনিক নামক বিষাক্ত উপাদান দ্বারা দূষিত। ততদিনে দেশের অগণিত মানুষ আর্সেনিক জনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন অথবা আক্রান্ত হয়েছেন। আর্সেনিকের দূষণে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত একটি গ্রামের নাম সামটা, এবং মনজুয়ারা পারভীন নিজে একজন আক্রান্ত পল্লীনারী, যিনি এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কে কাজ করার সূত্রে অন্যান্য আর্সেনিক আক্রান্ত পরিবারদের সেবা করবার এবং তাদের দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখবার সুযোগ পেয়েছেন। দেশের জনস্বাস্থ্যের ইতিহাসে এই ঘটনা যেমন ট্র্র্যাজিক, মনজুয়ারা পারভীনের সহজিয়া বচনেও উঠে এসেছে সেই মর্মান্তিকতার একটি ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী চিত্র। এ বইতে আর্সেনিকোসিসের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত একটি জনপদের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের আর্তনাদ এবং একইসঙ্গে তাদের যন্ত্রণা লাঘবের মরণপণ চেষ্টার বিবরণ রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের এই অকৃত্রিম কণ্ঠস্বরটি পাঠকসমাজ অবশ্যই চিনে নিতে পারবেন-এই প্রত্যাশা প্রকাশকের।
লেখক পরিচিতি মনজুয়ারা পারভীন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার সামটা নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাগআঁচড়ার ডাক্তার আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কের একজন সক্রিয় কর্মী। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানে কমিউনিটি মোটিভেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সামটা, টেংরা, বাগডাঙ্গা, মহিষাকুড়া এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মহিলা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লেখিকা ১৯৯৮ সালের নভেম্বার মাসে জাপানের মিয়াজাকি শহরে অনুষ্ঠিত "The 3rd Forum on Arsenic Contamination of Ground Water Asia" শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহন করেন।