ভূমিকা এই যে দীর্ঘ আয়ুর ছায়ায় বসে নিজের শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্য একটি একটি করে কবিতা নির্বাচন করছি, টের পাই, এটি একটি বিরল সৌভাগ্যের ব্যাপার। কবিতার জন্য সুখ ও জাগরণ যেমন দরকার তেমনি দরকার পতন ও বিষাদ। একদিন যেমন চেয়েছিলাম দীর্ঘ যৌবন এখন তেমনি চাই শান্ত প্রাচীনতা। এই তাে সেই সময় যখন পৃথিবীর খেলুড়ি হয়ে আবার গভীর বাল্যে ফিরে যেতে পারি। লেখাপড়া শুরু হবার আগেই কবিতার দূতী সখীদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। ছেলেবেলার সেই অবােধ সময়ে ওঁরা আসতেন আমার ছােট্ট জীবনের তুচ্ছ ঘটনা ধরে আর অফুরন্ত নিসর্গের ছদ্মবেশে। তখন থেকেই আমার কাছে কবিতার কলা কৌশল চাতুরি ছিল গৌণ। উপকরণ যতটুকু পেয়েছিলাম তা শুধু জীবনের কাছ থেকেই। পরিবর্তে আমিও তার কাছে সরল থাকার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি সােজা পথে তার মর্মের কাছে যেতে। শুরুতে বুঝি নি, কিন্তু এখন শেষে এসে বুঝছি, কবিতা, তথা শিল্প কিভাবে গােপনে আমাকে অবিন্যস্ত করেছে, তছনছ করেছে, আত্মসাৎ করেছে। সে কেড়ে নিয়েছে বহু কিছু। কিন্তু দিয়েছেও তাে অনেক। যাক গে, এখন বলব না, মৃত্যুর পরে জানা যাবে সে অনন্ত পরমায়ুর কোনাে রসায়ন দিয়েছিল কিনা। শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থমালার কর্ণধারদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা হারিয়ে যাবার আগে তারা আমার এই জন্মের হৃদয়, মন ও কল্পনার নির্যাসটুকু সময়ের কাছে পৌছে দেবার দায় নিলেন। মণীন্দ্র গুপ্ত