১৯২৩ সাল থেকে (বাংলা নাটকে)পালা বদলের যে পরিচয় আমরা পাই-সেই পরিচয়কে...আধুনিক করে তুলেছে গণচেতনার উপলব্ধি ও উপস্থাপনা। আধুনিক চেতনার মেজাজ ও গণচেতনার স্বরূপকে ব্যাখ্যা করেছেন।... মানুষের শ্রেণী-চরিত্রের পরিচয় গণচেতনার প্রসারিত রূপ এই পর্বের নাটকে বাস্তবভিত্তিক চেতনা বা সমাজ স্বরূপকে আরও দৃঢ়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। মন্মথ রায় থেকে বিংশ শতাব্দীর অপরাপর নাটকগুলির মধ্যে লেখক ড. চন্দ্র নাট্যবিচারের মানদণ্ডকে যুক্তিসিদ্ধ এবং ইতিহাস-সম্মতরূপেই বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর গড়ে ওঠা রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজ, ধর্মদর্শন, ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র কিভাবে নবতর ভাব পরিমণ্ডল নির্মাণ করেছে এবং তার দ্বারা নাটক কতখানি প্রভাবিত এই মৌলিক মানদণ্ডকে লেখক প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর কালের আবির্ভূত নাট্যকারদের সঙ্গে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা কালের নাট্যকারদের মধ্যে দেশকালের স্বাভাবিক ব্যবধান তাঁদের মানসিকতায় এবং শিল্পধর্মে প্রতিফলিত হয়েছে। এই স্বাতন্ত্রকে যথাযযাগ্য মূল্যায়নের কারণে গ্রন্থটিকে দুটি পর্বে ভাগ করে লেখক বিজ্ঞানসম্মত সমাজভাবনার পরিচয় দিয়েছেন-সেই সঙ্গে নাট্যকারদের এবং তাঁদের রচিত নাটকগুলির বিশেষত্ব ব্যাখ্যায় সুষ্ঠু চিন্তারীতি ও বিন্যাস প্রণালীকে উপস্থাপিত করেছেন। ১৯৬০-এর পরবর্তী নাটক জীবনের জটিল গ্রন্থি উন্মােচনে সার্থক হলেও পাশ্চাত্য নাটকের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সেগুলি আন্তর্জাতিক হতে চাইলেও কিভাবে ‘ফর্ম সর্বস্ব হয়ে পড়েছে, উপসংহারে ড. চন্দ্র তাও ব্যাখ্যা করেছেন। লেখক বিষয়ের সীমার মধ্যেও নাট্য সমীক্ষায় সামগ্রিতাকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
Dr. Dipak Chandra জন্ম : ২রা অগ্রহায়ণ ১৩৪৫। ১৮ নভেম্বর ১৯৩৮ইং। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. বি.এড ও পি-এইচ. ডি ভূতপূর্ব সম্পাদক: স্ফুলিঙ্গ, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি: রাইটার্স ক্লাব, সহ-সভাপতি: বঙ্গসাহিত্য সংস্কৃতি সম্মিলনী। সক্রিয় সাংস্কৃতিক কর্মী বাংলা আকাদেমি, ভারতীয় সংস্কৃতি ভবন। পুরস্কার: মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়। লেখালেখির হাতেখড়ি কলেজে। ১৯৭১ থেকে নিয়মিত। গল্প, উপন্যাস এবং সমালোচনা গ্রন্থের সংখ্যা ৫৫। এছাড়া সম্পাদিত গ্রন্থ ৪ এবং অভিধান ১। পুরাণকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে একালের উপযোগী করে পুনর্নির্মাণ করা যে সম্ভব এবং বহু পাঠকপাঠিকাকে টানা যায় তার এক আশ্চর্য নিরীক্ষায় তিনি সফল। তার সাফল্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. শিশিরকুমার দাস বলেন, “আপনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন সুপরিচিত লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক।...আপনি নিজের একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছেন। লেখার স্বতঃস্ফূর্তি এবং কল্পনার শক্তি আপনাকে আজকের বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে।” ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণের সময় তার কাহিনী ঝুঁকেছে মনের অতলান্ত রহস্যের দিকে, সাধারণ মানুষের দিকে। ফলে, পৌরাণিক চরিত্রগুলির ধ্যান-ধারণায়-অনুভূতিতে একটা বদল লক্ষ্য করা গেল।