সাত পুরুষের নাম। প্রাচীন মানবগোষ্ঠী মনে করত, একই ব্যক্তির দেহের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন আত্মা থাকতে পারে। তাদের এ চিন্তা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনে হলেও অধুনা অধিমনোবিজ্ঞানে দেখা যাচ্ছে যে, মানব দেহে বহু আত্মার একত্র সমাবেশ ঘটতে পারে। একেই বলা হয়েছে Multiple Personality. তবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তারা একক ব্যক্তিত্বও তৈরি করতে পারে। প্রাচীন মানবগোষ্ঠীও এমনতর বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল। অনেক মেলানেশিয়ান মনে করে যে, একটা মানুষের দেহে সাতটা আত্মা থাকে। সম্ভবত এটি ভারতীয় যোগীদের সূক্ষ্মদৃষ্টিতে ধরা পড়া একই ব্যক্তির সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম পর্যায় পর্যন্ত আত্মার সাতটি স্তর। মিশরীয়রাও বহু আত্মায় বিশ্বাসী ছিল। একই দেহে বহু আত্মার নামগুলি এই ধরনের ক = প্রতিভা, খইবৎ=ছায়া, খু=প্রাণশক্তি, রন=নাম, প্রভৃতি। এছাড়া হৃৎপিণ্ড, শক্তি, আকৃতি এবং নানা রূপের মধ্যেও তারা আত্মার স্বতন্ত্র অস্তিত্বে বিশ্বাস করত। প্রাচীন পার্শীরা মানুষকে বিভক্ত করত দেহ, প্রাণ, আকৃতি, আত্মা, প্রতিভা প্রভৃতি নানা ভাগে। রোমানরা ভাগ করত এই ভাবে :Juno= প্রতিভা, উমব্রা = কবরের আত্মা, স্পিরিটাম বা অ্যানিমা =মন-আত্মা বা আকাশে বিচরণকারী আত্মা প্রভৃতি। অনেকে মনে করত, দেহের মৃত্যু হলে এই সব আত্মা মিলিয়ে যায়। মৃত্যুতে দেহে আবদ্ধ আত্মা একটি আনন্দময় ক্ষেত্ৰ প্ৰাপ্ত হয় ৷ সাময়িক মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসে অনেকেই এ ধরনের অভিজ্ঞতার কথাও ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রাচীনেরা কিন্তু ভাবতেন যে, মৃত্যুর পর আত্মা বিকৃত ভাব প্রাপ্ত হয়। এ থেকেই তাদের মনে গোলমেলে ভূতের চিন্তা এসেছে। অনেকে আবার মনে করে যে, মৃত্যুর পর আত্মা নিরপেক্ষ এক ভুমিতে অবস্থান করে। সেখান থেকে আবার জন্ম হয়। এদের মতে আত্মা দেহ থেকে একটা স্বতন্ত্র সত্তা। দেহ মরে গেলেও তার মৃত্যু হয় না। বস্তুবাদী ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকলেই অনুরূপ বিশ্বাসে আস্থা স্থাপন করে আছে। বর্বরেরাও এখন আত্মার স্বতন্ত্র অস্তিত্বে বিশ্বাস করে।