`বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি' বইয়ের ফ্ল্যাফের লেখা ৬ নভেম্বর থেকে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭—বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অস্থির, অনিশ্চিত ঝড়ো সময়। বিচারপতি আবুসাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন এই কালপর্বে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। '৭৫এর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারে পর সামরিক বাহিনির ভিতরে সৃষ্ট অস্থিরতা, নেতৃত্বহীন রাজনৈতিক বিশৃংখলা, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, সেনা অভ্যুথান-পাল্টা অভ্যুথানে দেশ যখন ক্ষতবিক্ষত বিচারপতি সায়েম তখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সামরিক শাসনে বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে যেসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। তারই বিবরণ, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন এই বই। তিনি সামরিক সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হয়েছিলেন দেশ শাসনের ভার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তরের আশায়। কিন্তু কেন, কোন পরিস্থিতি তাকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করেই বঙ্গভবন ত্যাগ করতে হয়েছিল সেসব কথা তিনি বলেছেন এ বইতে। সীমিত পরিসরে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ কালপর্বে ক্ষমতা কেন্দ্র ও প্রাসাদ রাজনীতির অন্তরালের ঘটনাবলি উপস্থাপিত হয়েছে এ-বইতে।
বিচারপতি আবুসাদাত মুহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশের একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রখ্যাত আইনবিদ, নবপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি এবং ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯১৬ সালের ৮ই জুলাই রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন। রংপুর শহরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি অধ্যয়ন করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতা হাইকোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে চলে আসলে ঢাকায় আইন ব্যবসায় মননিবেশ করেন। সেখানে তিনি রাজনীতিবিদ এ কে ফজলুল হকের সান্নিধ্যে কিছুদিন কাজ করেন। আবুসাদাত মুহাম্মদ সায়েম পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের লোকাল বোর্ডের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা হাইকোর্ট আইনজীবী সমিতির একজন অন্যতম উদ্যোক্তা এবং কয়েক মেয়াদে সমিতির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। আবুসাদাত মুহাম্মদ সায়েম ১৯৬২ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি বেশ কিছু কমিশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন। ১৯৬৭ সালে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ ও উচ্ছেদের কারণ অনুসন্ধানের কমিশন, ১৯৭০ সালে সীমানা চিহ্নিতকরণ কমিশন এবং ১৯৭০-৭১ সালে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি আবুসাদাত মুহাম্মদ সায়েম। ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলার প্রথম বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান আবুসাদাত মুহাম্মদ সায়েম। বঙ্গভবনে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি ঢাকার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। সামরিক শাসনের অধীনে ১৯৭৫-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের টালমাটাল অবস্থায় তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালের পর, তার অবসর জীবনে তিনি লেখালেখিতে সময় দেন। বিচারপতি আবুসাদাত মুহাম্মদ সায়েম এর বই সমূহ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ, ‘বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি’। বিচারপতি আবুসাদাত মুহাম্মদ সায়েম এর বই সমগ্র জনপ্রিয়, কারণ তিনি তার গ্রন্থে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশের বিতর্কিত রাজনৈতিক ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছেন। ১৯৯৭ সালের ৮ই জুলাই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।