সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০০-৬০) গল্প লিখেছিলেন, তথ্য হিশেবে সম্পূর্ণ অজানা ছিল না আমাদের । কিন্তু জানা ছিল না তার পরিমাণ বা গুণমান। তাঁর দশটি খশড়া-খাতার প্রথমটিতেই (১৯২৩- ২৪) তিনটি গল্পের মুসাবিদা ছিল। স্বাক্ষরহীন দুটি অনুবাদ-গল্প ও স্বনামে ‘উপন্যাসের উপক্রমণিকা” নামে একটি অসমাপ্ত আখ্যান প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর জীবনকালে। সম্প্রতি তাঁর রক্ষিত কাগজপত্রেরও মধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ চোদ্দটি মৌলিক ও তেরোটি অনুবাদ-গল্পের খাড়া থেকে তোলা, প্রয়াসী থেকে পরিণত – কোন-কোনটির একাধিক পাঠ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সূত্র মিলিয়ে মনে হয়, মৌলিক গল্পগুলি রচনার সময় এক দশকের - ১৯২৩ থেকে ১৯৩২ – মধ্যে। অর্থাৎ তন্বী-র সমকালেই এই গল্প লেখার শুরু, শেষ অর্কেষ্ট্রা- পর্বে এসে। স্নাতকোত্তর শিক্ষাকাল থেকে অ্যাটর্নিশিপের শিক্ষানবিশি চলছে তখন। বিবাহ (২২ জুলাই ১৯২৪) -পূর্ব ও -পরবর্তী জীবনে ব্যাপ্ত এই গল্প লেখার পরিসর। মধ্যে বিরতি ঘটেছে জাপান, আমেরিকা ও ইয়োরোপ সফরের ফলে। বিদেশ থেকে ফেরার পরেও অন্তত একটি উপন্যাস-অভিলাষী বড়ো গল্প লেখার নিশ্চিত সন-তারিখ পাই আমরা, পরিচয় পত্রিকাও প্রকাশিত (১৩৩৮ শ্রাবণ) হয়ে গেছে ততদিনে। বিদেশী গল্পের অনুবাদ শুরু হয় গল্প লেখার প্রথম যুগেই, যদিও প্রকাশ ১৯৩৬-এ পরিচয় পত্রিকা ত্রৈমাসিক থেকে মাসিকে রূপান্তরের পর্বে, পত্রিকার ক্ষিদে মেটাতে।
গল্প লেখা বা অনুবাদের উৎসাহ সাময়িক উত্তেজনা ছিল না সুধীন্দ্রনাথের জীবনে। মনে হয়, তাঁর গল্প লেখার আয়োজনটি ছিল একান্ত গোপন ও ব্যক্তিগত এক অভিসার - আত্মীয়- বন্ধুদের মধ্যে দু-একজনকে অনুলিপি (হয়তো এমন-কি শ্রুতিলিপির) কাজে ব্যবহার করলেও তাঁর প্রকাশ্য রচনাকর্মের অন্তর্ভূত ছিল না এই সৃজন-পরিসর। এমনও হ'তে পারে, কোন-কোন গল্পে কুশীলবরা ছিলেন পারিবারিক বৃত্তে পরিচিত। গল্পগুলি লিখেই কি নিজেকে নির্মুক্ত করতে চাইছিলেন তিনি? অথবা তাঁর মনোনয়নে গল্পগুলি অভীষ্ট মানে পৌঁছতে পেরেছে কি-না - এ-বিষয়েই দ্বিধা ছিল লেখকের? আর সেইসব কারণেই গল্পগুলিকে যথাসম্ভব অপ্রচারিত রাখতেই সচেষ্ট ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ?