ফ্ল্যাপে লিখা কথা কথাশিল্পী মনোচিকিৎসকের এই উপন্যাসের মূলস্রোতে রয়েছে ‘না’ বলার সুফল, প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়ে নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জয়গান। দেখা যাবে অবাঞ্চিত আহ্বান/ আমন্ত্রণকে চেনা ও ‘না’ বলার অপারগতার কারণে এক তরুণীর ডুবে যাওয়ার মর্মন্তুদ জীবনচিত্র।
‘না’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রুবা। তেজস্বিনী এই তরুণী ইতিবাচক মূল্যায়নের মাধ্যমে তৈরি করে সুন্দর পথ চলা। নেতিবাচক চিন্তার ঝড় সামলে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যায় সামনে। রবিনকে ভালোবাসে রুবা। রবিনও ভালোবাসে রুবাকে। তারপরও সম্পর্কের টানাপোড়েনে সন্দেহের বিষ ঢুকে যায় দুজনের মনে। জীভাবে জড়িয়ে যায় সন্দেহের ঘূর্নিতে? কীভাবে মোকাবিলা করে তুষের আগুন? জানতে হলে পড়তে হবে ‘না’ উপন্যাসটি।
হোস্টেল-জীবনের রুমমেট সিমি, মণি, সানিয়াদের নিয়ে রুমে মায়ার জগৎ গড়ে তোলে রুবা। বন্ধুত্বের মর্মস্পর্শী আবেদন মুগ্ধ করবে পাঠক-হৃদয়। তাদের সংগ্রামী জীবনের মধ্য থেকে উপন্যাসে উঠে এসেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তৃত অপরাধচিত্র। একজন ঘৃণ্য অপরাধী বন্ধু সেজে চোবল বসাতে চায় রুবার বুকে। রুবার ব্যক্তিত্বের সাবলীল প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে ঢুকতে পারেনি বিষবাণ! এই বাণে আক্রান্ত হয় রুমমেট সিমি। সর্বনাশের শেষ সীমানায় পৌছে যায় সে। পাঠক-হৃদয় বেদনায় চিৎকার করে উঠবে। তরুণবয়সিরা বুঝতে পারবে ভালো মুখোশের আড়ালে ওত পেতে আছে কী বিপদ, চারপাশে বিছানো আছে কী ভয়াবহ জাল! এই জালে একবার পা দিলে নিঃশেষ হয়ে যায় জীবন।
মেয়েরা কীভাবে নিপীড়ন ভোগ করে, কীভাবে ভুল করে, ভুল আবেগের বশে বিপর্যস্ত করে নিজের জীবন ও পরিবার, তারই চিত্র দেখা যাবে শিমুল ও ইরা চরিত্রে। ‘না’ উপন্যাসে আরও রয়েছে স্কুল পড়ুয়া দুটি টিনএজ চরিত্র- আনিকা ও তিমু। মোবাইল প্রীতি এদের পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটায়। জেনারেশন গ্যাপের কারণে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। টিনএজাররা বুঝতে পারবে নিজেদের ভুলত্রুটি। অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের ভুল শুধরে নেওয়ার পথ খুঁজে পাবে তরুণ-তরুণীরাও।
রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ কুঠিবাড়ির অন্তর্গত চেতনা থেকে উঠে আসে মানুষের ভালোবাসার গোপন ডাক। কুঠিবাড়ির বর্তমান ও ঐতিহাসিক ঘটনা যোগ হয়েছে উপন্যাসে। কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র স্পর্শে ভালোবাসায় ভরে উঠবে মন।
উপন্যাস শেষ হওয়ার পর সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অধ্যায়ে দেখা যাবে মনোবিশ্লেষণ-বিজ্ঞানচিত্র। বিজ্ঞানের আলোয় খুলে যাবে পাঠকের চোখ। আসুন, অনৈতিকতা ও অশুভের বিরুদ্ধে করি নিজের বোধশক্তি। মন।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।