দেবাসুরের সংগ্রাম আজও চলেছে। সেকালের মতো একালেও দুষ্ট-দেবতারা মেহনতি-অসুরদের অমৃতের অংশ দিচ্ছেন না। মোহিনী-মায়ায় ভুলিয়ে তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন। তাই সংগ্রাম চলেছে। এ সংগ্রাম বঞ্চক ও বঞ্চিতের, শোষক ও শোষিতের। এ সংগ্রাম চিরকাল চলবে। কিন্তু চিরকালের কথা থাক। আমি ভাবছি সেকালের কথা। ভাবছি সমুদ্রমন্থনের কথা, অমৃতকুম্ভের কথা। দেবরাজ ইন্দ্রের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে নারায়ণ লক্ষ্মীদেবীকে সিন্ধুকন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করতে আদেশ দিলেন। তারপরে তিনি পিতামহ ব্রহ্মাকে বললেন— দেবতাদের বলুন, তারা অসুরদের সঙ্গে সমুদ্রমন্থন করুক। মন্থন শেষে সমুদ্র থেকে লক্ষ্মী ও ধন্বন্তরি উঠে আসবেন। দেববৈদ্য ধন্বন্তরি অমৃতকুম্ভ নিয়ে উপস্থিত হবেন। ব্রহ্মার কাছে বিষ্ণুর নির্দেশ শুনে দেবতারা সবাই গোলকে এসে হাজির হলেন। নারায়ণ তাঁদের বললেন— তোমরা অসুরদের সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রমন্থন শুরু ক’রো। মন্থনকালে অনেক ওষধি ও রত্ন পাবে। কিন্তু তাতে লুব্ধ হয়ে যেন আবার মহুন বন্ধ করে দিও না! ধৈর্য সহকারে মন্থন চালিয়ে যেও। তাহলেই তোমরা অমৃত এবং লক্ষ্মীলাভ করতে পারবে। দেবরাজ ইন্দ্র অসুরদের সমুদ্রমন্থনের আমন্ত্রণ জানালেন। প্রতিশ্রুতি দিলেন, মন্থনের সম্পদ সমানভাবে ভাগ করে নেবেন। অসুরগণ দেবতাদের সাহায্য করতে সম্মত হলেন। সমুদ্রমন্থনের আয়োজন সম্পূর্ণ হলো। মন্দার পর্বত হলো মন্থনদণ্ড। বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার কূর্মরাজ মন্দারকে ধারণ করতে সম্মত হলেন। নাগরাজ বাসুকি হলেন মন্থনরজ্জু। দেবতারা তাড়াতাড়ি গিয়ে বাসুকির পেছন দিক ধরলেন। অসুরদের থাকতে হলো সামনে। শুরু হলো সমুদ্রমন্থন ।
Shonku Moharaj বর্তমান বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যের জনপ্রিয়তম নাম। সুগত সাতাশ বছরে তাঁর ছত্রিশটি শিল্পকর্মের মধ্যে তিনখানি বাদে বাকি সবকটিই ভ্রমণকাহিনী। তাঁর পনেরোটি হিমালয়-কাহিনীর শেষখানি ব্রহ্মলোকে। বিগত গ্রন্থে শঙ্কু মহারাজ-এর সারথ্যে পাঠক-পাঠিকার মানস-ভ্রমণ সম্পণ ‘হয়েছে সূদূরবতী’ সুইজারল্যান্ডে, জয়ন্তী জুরিখে। য়ুরোপের আলপস থেকে স্বল্প স্বাদবদল করে লেখক আবার ফিরে এলেন হিমালয়ে, দেশমাতার পূজায় পুনরায় নিজেকে নিবেদন করতে। বিচ্ছেদবাদ যখন ভারতের অঙ্গচ্ছেদনে শামিল, জাতীয় চেতনার সামনে তখুনি তিনি তুলে ধরলেন গুর্জর কিশোরী শ্যামা আর কিশতোয়ারী মালবাহক আবদুল রসিদের কথা, যারা বিদায়বেলায় বাঙালি অভিযাত্রীদের জন্য চোখের জল ফেলে, হিন্দু সাহেবদের নিরাপত্তার জন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কারফিউ কবলিত শহরে ছুটে আসে। বাঙালির কাছে প্রায় অপরিচিত কিশতোয়ার-হিমালয়ের ওপরে রচিত বাংলাসাহিত্যের প্রথম ভ্রমণকাহিনী এই ব্রহ্মলোকে। কলকাতার একদল দামাল যুবক গিয়েছিলেন কিশতোয়ার হিমালয়ের দুগেমতম শৃঙ্গ ব্রহ্মা-১ (২১,০৪৯) পর্বতাভিযানে। লেখক সেই অভিযাত্রীদের অন্যতম। তবে তিনি কেবল পর্বতারোহণ নিয়েই ব্যস্ত থাকেননি। সেই সঙ্গে তাঁর সাবলীল ভাষায় বলেছেন, অনাবিষ্কৃত বিশতোয়ার হিমালয়ের ভাষা ভূগোল ইতিহাস গাছপালা পশু-পাখি পাহাড় ও পথের কথা, বলেছেন সরল ও সুন্দর মানুষদের কথা, যাঁদের সহজ জীবন আর লেখকের সরস লিখন একযোগে পাঠক-পাঠিকাকে নিয়ে যাবে ব্রহ্মলোকের ব্রজ্যায়।