ডুমরির খালের নিচে আছে ভয়ানক সব শয়তান। তারা কি এই গ্রহের, নাকি মহাকাশের অন্য কোথাও থেকে পৌছে গেছে আমাদের পৃথিবীতে। বছরের পর বছর আলােহীন জ্ঞান-কোটরে বসে বসে ঝিমােন জ্ঞানীমামা স্বপ্ন দেখে কত কিছুর। কালাে কাক কৃষ্ণকুম্ভ কেমন করে যেন আটকে যায় ক্রিম বিক্রি করা দোকানির খাঁচায়। বিজ্ঞাপন দেখে দেখে জেনেছে কৃষ্ণকুম্ভ এই ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম মাখলে সিদ্ধি নিশ্চিত। তার ফরসা হওয়া কে-ই বা আটকাতে পারে ! শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণকুম্ভ কি পারবে খাচা খুলে বেরিয়ে এসে ডুমরির খালের কাছে, জ্ঞানীমামার জ্ঞান-কোটরের কাছাকাছি চলে আসতে? এদিকে নিজের পুরনাে দূরবীন হাতে নিয়ে ক্রমাগত দূরবীনবাজি করে যায় গােয়েন্দা দুন্দুভি। তার বেশির ভাগ নজরই আটকে থাকে জ্ঞানীমামার জ্ঞানকোটরের দিকে। কি হতে যাচ্ছে সেখানে আসলে? জ্ঞানীমামার মতােই একেবারে হুবহু দেখতে একজন গুণীও কি থাকছে জ্ঞান-কোটরে? ডাকাত বটাই তার ছিপ নৌকো নিয়ে হা-রে-রে-রে করতে করতে ডাকাতি করে চলে নিয়মিত। ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’-এর সময়কার পাইরেটদের ম্যাকাও ‘রামটিয় ’ অথবা ‘টিয়ারাম' নাম নিয়ে উড়ে এসে বসে বটাইয়ের কাঁধের ওপর। সব মিলিয়ে সে একা মহা কোলােয়াঙ্কারী ব্যাপার। কিন্নর রায় দেখালেন কেমন করে স্বপ্ন, কল্পনা, বাস্তব, ইতিহাস, রূপকথা, পরণকথা মিলিয়ে মিশিয়ে গড়ে তােলা যায় অন্য এক আখ্যান। জলের ওপর জেগে ওঠা ‘সােনালী ডানা’-রা কাকে যে ভয় দেখায় অথবা ভরসা যােগায়—সে সব জানতে এই কাহিনি পড়তেই হবে।
Kinnar Ray-এর জন্ম ১৯৫৩ সালের ৬ নভেম্বর কমলকাতার চেতলায়, পিসিমার বাড়িতে। বাবা অমরনাথ রায় মা গায়ত্রী রায়-দুজনেই প্রয়াত। এই আখ্যানকারের শৈশব, বালকবেলা, কৈশোর আর প্রথম যৌবন কেটেছে চেতলা, শিবপুর আর হাওড়া জেলার বালিতে। বিপুল দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে করতে স্কুলে পড়ার সময়েই সত্তরের উত্তাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন কিন্নর। তখন দু'চোখে সমাজ বদলের স্বপ্ন। সেই সব টালমাটাল ঝোড়ো দিনে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মাশুল হিসেবে বার বার জেলে যেতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৭৭-এ জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পর পরই জেল থেকে বেরিয়ে জীবিকার সন্ধানে বহু ধরনের কাজ করেছেন। বিচিত্র সেই সব পেশা। তার মধ্যেই খবরের কাগজে যাওয়া-আসা শুরু| লেখালেখির শুরু সত্তর দশকের প্রায় শেষ লগ্ন থেকে। লিখে থাকেন, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটদের জন্য নানা ধরনের বিচিত্র লেখ তার খবরের কাগজের হিচর ও উত্তর সম্পাদকীয়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় নব্বই। পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মান। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার, সোপান পুরস্কার, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ও আখিল ভারতীয় মারোয়াড়ি সম্মেলন’-এর দেওয়া ভরত-ব্যাস পুরস্কার সহ অন্যান্য বহু পুরস্কার ও সম্মান। ২০০৭ -এ ‘মৃত্যুকুসুম’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ করে তাঁকে আবিষ্কার করাও তাঁর কাছে এক ব্রতই। পাখিদের জীবনযাত্রা, ওড়াউড়ি, খাদ্য সংগ্রহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসেন। যে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক চোখরাঙানি, চাপ তাঁর না-পসন্দ। ‘চলতি হাওয়ার পন্থী' তিনি কখনও হতে চাননি। তাঁর জীবন যাপন, লেখালেখি, কথাবার্তা বলে যায় সেই কথাই।