সাহিত্যমনস্ক অথবা বলা যেতে পারে সাহিত্য যশোপ্রার্থী তরুণ বাঙালির হাতে প্রথম কলম উঠলে যে ফসলটি উৎপন্ন হয় তার নাম কবিতার প্রথম গুঞ্জন। তা ভালও হতে পারে। আবার কিছু না হতেও পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুরুটা কবিতা দিয়েই হয়। গৌতম রায়ও সেই আবেগ থেকে বেরুতে পারেননি। মন গুণগুনিয়ে উঠলে সেদিন আসতো শুধুই কবিতা। তারপর জীবন না থেমে যেমন এগিয়ে গেছে, কবিতা কখন যেন হয়ে ওঠে গল্প, গল্প থেকে নাটক, নাটক থেকে উপন্যাস। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে এখনও তিনি কবিতা লেখেন। তবে তা কেবল নিজের জন্যেই। এর পর শুরু হয় জীবন সফর। অনুরাগের প্রথম পর্বে কিছু ছোট গল্প আর নাটক। হ্যাঁ, একটা সময় গেছে যখন আকাশে বাতাসে কেবল নাটকের হাওয়া। দল গড়েছেন, দল ভেঙেছে, কিন্তু নাটক করা বা নাটক লেখা থেকে থেমে থাকেন নি। এরই মধ্যে চলছিল ছবি আঁকা। কলেজ জীবন মাঝপথে যেতে না যেতেই ঢুকে পড়লেন আর্ট কলেজে। কখনও শ্মশান চত্বরে। কখনও স্টেশন প্রাঙ্গনে, কখনও ঘাটে, মাঠে, রাজপথে অথবা বনেবাদারে। আর্ট কলেজ শেষ করেই ঢুকে পড়লেন বাণিজ্য-শিল্পে, জীবিকার প্রয়োজনে। নিজেকে নিয়োগ করলেন প্রচ্ছদ শিল্পে। এ পর্যন্ত কতো যে প্রচ্ছদ এঁকেছেন সেটা তিনি নিজেও সঠিক বলতে পারবেন না।
গৌতম রায় (জুন ১৯৩৯) স্কুল পড়ুয়া অবস্থা থেকেই একটা নেশা ঢুকে গিয়েছিল মাথার মধ্যে, নাটক দেখা। স্টার, রঙ্গমহল, শ্রীরঙ্গম (বিশ্বরূপা), মিনার্ভা প্রায় গোগ্রাসে গেলা। মাথার মধ্যে নাটুকে পোকাটা তখন থেকেই বিজবিজ করত। সেই আর্কষণ থেকেই নাটকে অভিনয় করা। স্কুল জীবন শেষ করার আগে থেকেই অভিনয় শুরু। কিন্তু আর এক নেশা, ছবি আঁকা। সেই টানেই ইন্টারমিডিয়েটের পর আর্ট কলেজ। কলেজ জীবন শেষ করেই নেমে পড়তে হল বাণিজ্যিক শিল্পে। রোজগারের ব্যবস্থায়। এটা সেটার পর পাকাপাকি ভাবে প্রচ্ছদ শিল্পের জগতে। ১৯৬২ থেকে ২০১২। এখনও প্রচ্ছদ আকাঁ চলছে। সহস্রাধিক প্রচ্ছদের রূপকার। তুলি ছাড়াও কলম চলতে শুরু করে নাট্য রচনা দিয়ে। শুধু নাটক রচনা নয় সঙ্গে চলে গল্প, উপন্যাস, মাঝে মাঝে কবিতাও। সামাজিক গল্প উপন্যাস ছাড়াও তাঁর বিশেষ ন্যাক ছিল রহস্যধর্মী কাহিনি রচনায়। সামাজিক গল্প উপন্যাসের চেয়েও এক সময় তিনি গোয়েন্দা গল্প আর উপন্যাস নিয়ে নিয়মিত লেখা শুরু করেন। এতাবৎকাল তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা পঁচাত্তরেরও বেশি।